প্রতিবেদক,সিলেট: জামায়াত আহুত সমাবেশের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় এসএমপি’র পক্ষ থেকে “সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি” এ কথা মৌখিকভাবে জানিয়ে দেয়া হয় জামায়াত নেতৃবৃন্দকে। জামায়াত লিখিতভাবে অনুমতির আবেদন করলেও এসএমপি মৌখিকভাবে অনুমতি না দেয়ার তথ্য জানায় জামায়াতকে। জামায়াত নেতৃবৃন্দ এটা অফিসিয়াল তথ্য কি না জানতে চাইলে প্রত্যুত্তরে ‘হ্যা, অফিসিয়াল’ বলে জানায় পুলিশ।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ সহিংসতার আশঙ্কা থাকায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি জানিয়ে গণমাধ্যমে বলেছেন, কাউকে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। বিনা অনুমতিতে সমাবেশ করার চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মু. শাহজাহান আলী প্রভাতবেলা’কে বলেন, পুলিশ জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। মৌখিকভাবে এ কথা জানান হলে আমরা জানতে চাই এটা তাদের অফিসিয়াল বক্তব্য কিনা তাঁরা জানান ‘হ্যাঁ , অফিসিয়াল’। শাহজাহান বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা সার্বিক পরিস্থিতি ও করণীয় জানান দেব।
সিলেট নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে ১৫ জুলাই দুপুরে সমাবেশ করতে চেয়ে গত ৫ জুলাই পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করে মহানগর জামায়াত। সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সভা, লিফলেট বিতরণ করে দলের নেতা কর্মী। এসএমপি কমিশনার , উপকমিশনার সহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় দেখা করেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ। প্রচার প্রচারণায় পুলিশ কোন বাধা দেয়নি। সমাবেশে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
শুক্রবার সকাল থেকে রং পাল্টাতে শুরু করে। নগরীতে কড়া পাহারা বসায় পুলিশ। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের অবস্থান ছাড়াও বিশেষ মহড়া দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে জামায়াতের ডাকা সমাবেশস্থলের পাশে পুলিশের বিশেষ ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের (সিআরটি) সদস্যরা অবস্থান নেয়।বিভিন্ন মোড়ে মোটর সাইকেল তল্লাশী ও সিআরটি’র মহড়া চলতে দেখা যায়।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব যোবায়েরসহ কয়েকজন নেতা রেজিস্ট্রারী মাঠ পরিদর্শন করলেও আটকের ঘটনার পর তারা আড়ালে চলে গেছেন।
জামায়াতের দায়িত্বশীল সুত্র বলছে, তাঁরা ফাঁদে পা দেবেন না। পুলিশ জামায়াতের প্রস্তুতি দেখে ধারণা করছিল ‘অনুমতির তোয়াক্কা’ না করেই জামায়াত সমাবেশ করবে। সেখানে একটা বিশৃংখলা বাঁধিয়ে জামায়াতকে নতুন করে ফাঁসানো। সে ফাঁদ আঁচ করেই জামায়াত সমাবেশ করার দিকে পা বাড়ায়নি। উপরুন্ত ‘প্রশাসনকে’ বেকায়দার দিকে ঠেলে দিয়েছে। গত ২৪ মে ঘোষিত মার্কিন ভিসানীতিতে বলা হয়, বিরোধীদের সভা-সমাবেশে বাধা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা বলে গণ্য হবে। বাধা দানকারীরা ভিসা পাবে না বলে নীতিতে জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
এই পরিস্থিতিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রেখেছে জামায়াত।
বিভিন্ন এজেন্সি ও গণমাধ্যমের অনুসন্ধান মতে, জামায়াত প্রথমে শুধুমাত্র সিলেট সিটি’র জনশক্তি নিয়ে সমাবেশের প্রস্ত্ততি নেয়। প্রথমদিকে দলটির পরিকল্পনা ছিল অর্ধলক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি। পরবর্তীতে সিলেট , মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের কয়েকটি উপজেলার জনশক্তি নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে লক্ষাধিক জনতার উপস্থিতি জামায়াতের টার্গেট ছিল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াত সমাবেশ করতে পারলে তাদের ফায়দা হতো। পুলিশ ‘অনুমতি’ না দেয়ায়ও তাদের ফায়দা হয়েছে। ‘স্যাংশান’- এর আওতায় পড়তে পারেন এসএমপি’র কয়েকজন কর্মকর্তা। সারাদেশের তুলনায় সিলেট অঞ্চলে জামায়াতের সাথে শাসকদের সম্পর্কও সহনশীল। এই অবস্থায় পুলিশের সহনশীল ভূমিকা নেয়াই উত্তম ছিল। অভিমত রাজনেতিক বিশ্লেষক মহলের।
সবচেয়ে বড় ফায়দা জামায়াতের ‘ আঁতাত নিয়ে বিএনপি’র ধারাপাত’ বিষয়ে। ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি এবং সফল সমাবেশ করায় ‘ আঁতাত’ এর গন্ধ শুকেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। ‘নিশিরাতের ভোট’ ‘অবৈধ সংসদ’ বলে চেঁচামেচি করা পয়তাল্লিশোর্ধ অবিবািহিত এই ব্যারিস্টার এই সংসদের কাছে ঢাকায় প্লটের জন্য আবেদন করেন। আবেদনে তাঁর কোন প্লট বা বাসাবাড়ী নেই বলেও উল্লেখ করেন। পরে আরো ২/১ জন নেতাও সুর মেলান ফারহানার সাথে। অবশ্য যুক্তরাজ্য থেকে বিএনপি’র হাইকমান্ড তাৎক্ষণিক জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সাথে টেলিযোগাযোগ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন এবং করছেন।
সিলেট প্রশাসন এই এই ‘আঁতাত ধারাপাত’- এর গণনা ভুল প্রমাণ করেছে । জামায়াতের সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে।
শেয়ার করুন