ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি আবারও শুরু করেছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) থেকে শুরু হয়েছে দুই দিনের ওই শুনানি কার্যক্রম। গণহত্যার অভিযোগের পাশাপাশি ইসরায়েল অভিযানের ওপর জরুরি স্থগিতাদেশ চেয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলাটি দায়ের করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
ইসরায়েল শুরু থেকেই এ মামলাকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ এবং ‘নৈতিকতাবিরোধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে। গত জানুয়ারিতে আইসিজে একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিল। সে রায়ে আদালত ইসরায়েলকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড থামানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু ইসরায়েল তা করেনি। উল্টো বৃহস্পতিবার দেশটি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের শুনানিতে নিজ সামরিক প্রয়োজনীয়তার পক্ষে সাফাই গেয়েছে। ইসরায়েলি বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা গিলাদ নোয়াম বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের বিরুদ্ধে যে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে তার সঙ্গে বাস্তবতা ও চলমান পরিস্থিতির মিল নেই। সেটি বাস্তবতা-বিবর্জিত একটি দাবি। নোয়াম আরও বলেন, ‘গণহত্যার মতো ঘৃণ্য অভিযোগকে উপহাসে পরিণত করেছে এ মামলা।’
ইসরায়েলের বক্তব্য উপস্থাপনের আগে ইসরায়েলপন্থি প্রতিবাদকারীরা আদালতের বাইরে উপস্থিত হয়েছিল। তাদের হাতে ছিল হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের ছবি। এ সময় তারা জিম্মিদের মুক্তি দাবি করেন।
ইসরায়েলি ভূখণ্ডে গত বছরের ৭ অক্টোবর হামলা করে হামাস। এতে মারা যান প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি। পাশাপাশি হামাস ২৫৩ জন জিম্মিকেও সঙ্গে করে নিয়ে আসে। পরে এর জেরে ইসরায়েল যুদ্ধ ঘোষণা করে হামাসের বিরুদ্ধে। তারা জানায়, হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে তারা।
কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় প্রাণ হারায় ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক এবং নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ।
গত বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার দূত ভুসিমুজি ম্যাডোনসেলা অনুরোধ জানান, আদালত যাতে ইসরায়েল তাৎক্ষণিকভাবে, পুরোপুরি এবং নিঃশর্তভাবে সম্পূর্ণ গাজা উপত্যকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার আইনি দল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযানকে গণহত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অভিহিত করেছে। অতীতে আইসিজে ইসরায়েলের অনুরোধে সাড়া দিয়ে মামলা খারিজ করে দিতে রাজি হয়নি। তবে সেবার গণহত্যা থামানোর নির্দেশ দিলেও ইসরায়েলকে অভিযান থেকে সরে আসার কোনো নির্দেশনা দেননি আদালত।
এদিকে, আইসিজের কাছে সর্বশেষ আবেদনে দক্ষিণ আফ্রিকা উল্লেখ করেছে, ইসরায়েল যাতে আগামীতে গাজায় সহায়তাকর্মী, সাংবাদিক ও তদন্তকর্মীদের নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার দেয়।
ইসরায়েল রাফায় ১১ দিন আগে অভিযান শুরু করেছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা এ অভিযান শুরু করা থেকে বিরত থাকতে বলেছিল ইসরায়েলকে। কিন্তু তারা সে অনুরোধ শোনেনি। ইসরায়েলের অভিযানের কারণে রাফায় আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ মানুষের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর ৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ রাফা থেকে পালিয়েছে।
তবে রাফা থেকে পালানো মানুষের যাওয়ার মতো কোনো স্থান আর গাজায় অবশিষ্ট নেই। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় পুরো উপত্যকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
শেয়ার করুন