ওসমানী মেডিকেলে হামলা: আত্মসমর্পণ করলেন আ.লীগ নেতার ভাতিজা

সিলেট

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের শ্লীলতাহানি ও দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি মো. আব্দুল্লাহ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। আজ সোমবার সকালে তিনি আত্মসমর্পণ করেন।

মো. আব্দুল্লাহ (এ এইচ আব্দুল্লাহ) সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিসিকের ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল খালিকের ভাতিজা। নগরীর কাজলশাহ এলাকার বাসিন্দা তিনি।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ সিলেটভিউকে বলেন, ‘মামলার আসামি আব্দুল্লাহ আজ সকালে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। এর আগে পুলিশ তিন আসামিকে গ্রেফতার করেছিল।’

এ চারজন বাদে এখনও আরো চার আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

যা হয়েছিল ওসমানী হাসপাতালে>>
জানা গেছে, ওসমানী মেডিকেল কলেজের এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে গত ৩১ জুলাই রাতে বাগবিতণ্ডা হয় এক রোগীর দুই স্বজনের। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ, বহিরাগতরা নারী চিকিৎসকের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সংঘবদ্ধ হয়ে ওই দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়।

ওই ঘটনার জের ধরে গত ১ আগস্ট রাত ৯টার দিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র ইমন আহমদ (২৪) ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র নাথ (২২) এর ওপর কলেজের পেছনে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সহপাঠীরা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন অসুস্থরা। এ ছাড়া কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন ইন্টার্নরা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। এদিকে, ১ আগস্ট দিবাগত রাত ১টার দিকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়াকে নিজ কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। প্রায় ঘন্টাখানেক অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি।

সেই রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শাহ অসিম ক্যানেডি বলেন, ‘রোববার এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর দুই স্বজন খারাপ ব্যবহার করেন। তাদেরকে আমরা পুলিশের হাতে তুলে দেই। এ ঘটনার জেরে সোমবার (১ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে বহিরাগতরা আমাদের কয়েক শিক্ষার্থীকে মারধর করে। এতে দুজন গুরুতর আহত হন। এর আগেও অনেকবার এমন ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।’

ধর্মঘট ও অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান এসএমপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এ ছাড়া হাসপাতালে যান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে বসে বৈঠক। রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মেডিকেল প্রশাসনের মামলা করাসহ পাঁচ দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর মঙ্গলবার (২ আগস্ট) ২টা পর্যন্ত ধর্মঘট ও অবরোধ প্রত্যাহার করেন আন্দোলনরতরা। তবে তাদের দাবি আদায় না হওয়ায় গত মঙ্গলবার ২টার পর থেকে ফের আন্দোলন শুরু হয়।

২ আগস্ট বেলা আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খানও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু সব আসামিকে গ্রেফতার না হওয়া অবধি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

গত বুধবারও (৩ আগস্ট) আন্দোলন অব্যাহত ছিল। আন্দোলনকারীরা সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন, সড়ক অবরোধ করেন। এতে রোগীদের সাথে সাথে পথচারী সাধারণ মানুষও চরম দুর্ভোগে পড়েন। বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে আন্দোলন বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সকাল ৮টা অবধি স্থগিতের ঘোষণা দেন ইন্টার্নিরা। এর মধ্যে আসামি গ্রেফতার না হলে হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করার হুমকি দেন তারা।

এদিকে, বুধবার দিবাগত রাতে মামলার প্রধান আসামি দিব্য সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বৃহস্পতিবার সকালে নিজেদের আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

সেদিন আন্দোলনকারীদের পক্ষে ওসমানী মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ মুন্তাকিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ঘটনায় প্রধান আসামি দিব্যকে আমাদের পুলিশ বাহিনী গ্রেফতার করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সম্মানিত ভিসি মহোদয়, সম্মানিত পরিচালক স্যারসহ আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের অনুরোধে আমরা কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করছি। আমরা সাতদিন সময় বেঁধে দিচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে যদি বাকি আসামিরা ধরা না পড়ে, তাহলে আমরা আবারও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’

দুই মামলা>>
গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকালে নগরীর কোতোয়ালী থানায় দুটি মামলা হয়। পৃথক দুই মামলায় আসামি করা হয় ৮ জনকে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ ও ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিএ-টু প্রিন্সিপাল ও সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহমুদুল রশিদ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- দিব্য সরকার, আব্দুল্লাহ, এহসান আহমদ, মামুন, সাজন, সুজন, সামি ও সাঈদ হাসান রাব্বি।

এদের মধ্যে নগরীর মুন্সিপাড়ার মৃত রানা আহমদের ছেলে সাঈদ হাসান রাব্বি (২৭) ও কাজলশাহ এলাকার আব্দুল হান্নানের ছেলে এহসান আহমদকে (২২) গত সোমবার (১ আগস্ট) দিবাগত রাত ১টার দিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এ দুজনই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। তন্মধ্যে সাঈদ হাসান রাব্বি সিলেট মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

এরপর গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর শাহপরান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় দুই মামলার প্রধান আসামি দিব্য সরকারকে। তিনি নগরীর কাজলশাহ এলাকার ৫২নং বাসার রমনীকান্ত সরকারের ছেলে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *