ওসমানী হাসপাতালের ঘটনায় হচ্ছে দুই মামলা, আসামি ৫

সিলেট

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বহিরাগতদের হামলায় দুই শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ে করা হচ্ছে। মামলায় আসামি করা হচ্ছে পাঁচজনকে।

এমন তথ্য সিলেটলাইনকে নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ।

 

তিনি বলেন, ‘দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হচ্ছে।’ তবে মামলা রেকর্ড না হওয়া অবধি আসামিদের নাম প্রকাশ করতে চাইছে না পুলিশ।

ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মঈনুল হক সিলেটভিউকে বলেন, ‘কলেজের পক্ষ থেকে আমরা একটি মামলা করছি। আরেকটি মামলা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’

এদিকে, এ ঘটনায় গতকাল রাতে দুই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে আটক করেছিল পুলিশ। এরপর নতুন করে কাউকে আটক করা যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা আজবাহার আলী শেখ।

জানা গেছে, ওসমানী মেডিকেল কলেজের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী (ইন্টার্ন চিকিৎসক) ইমন আহমদের সঙ্গে গত রোববার দুপুরে বাগবিতণ্ডা হয় এক রোগীর দুই স্বজনের। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সংঘবদ্ধ হয়ে ওই দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়।

ওই ঘটনার জের ধরে গতকাল সোমবার রাত ৮টার দিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র ইমন আহমদ (২৪) ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র নাথ (২২) এর ওপর কলেজের পেছনে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সহপাঠীরা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন অসুস্থরা। এ ছাড়া কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন ইন্টার্নরা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। এদিকে, রাত ১টার দিকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়াকে নিজ কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। প্রায় ঘন্টাখানেক অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি।

গত রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শাহ অসিম ক্যানেডি বলেন, ‘রোববার এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর দুই স্বজন খারাপ ব্যবহার করেন। তাদেরকে আমরা পুলিশের হাতে তুলে দেই। এ ঘটনার জেরে সোমবার রাত ৮টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে বহিরাগতরা আমাদের কয়েক শিক্ষার্থীকে মারধর করে। এতে দুজন গুরুতর আহত হন। এর আগেও অনেকবার এমন ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।’

ধর্মঘট ও অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান এসএমপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এ ছাড়া হাসপাতালে যান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে বসে বৈঠক। রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মেডিকেল প্রশাসনের মামলা করাসহ পাঁচ দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর ধর্মঘট ও অবরোধ প্রত্যাহার করেন আন্দোলনরতা।

রাতে মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী অমিত হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, আমাদের দাবিগুলো পূরণ করা হবে। এ জন্য আমরা আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করেছি।’

এদিকে, গত রাত ১টার দিকে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন নগরীর মুন্সিপাড়ার মৃত রানা আহমদের ছেলে সাঈদ হাসান রাব্বি (২৭) ও কাজলশাহ এলাকার আব্দুল হান্নানের ছেলে এহসান আহমদ (২২)। এ দুজনই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। তন্মধ্যে সাঈদ হাসান রাব্বি সিলেট মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘দুজনকে আটক করা হয়েছে। জড়িত বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *