ওসমানী হাসপাতালে রোগীর মাথায় সেলাই দেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী

সিলেট

হাসপাতালের শয্যায় রোগীর মাথায় সেলাই দিচ্ছেন এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী। পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন আরও এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ১২ ফেব্রুয়ারি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে এমন ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।

অনুসন্ধানে মাথায় সেলাই দেওয়া ব্যক্তির পরিচয়ও পাওয়া গেছে। তিনি এবাদুর রহমান হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত। তাঁর সঙ্গে পরে যোগ দেওয়া সাইফুল ইসলামও হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত।

হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। পরিচ্ছন্নতাকর্মী রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকাপয়সা নিয়ে এমনটি করে থাকেন। হাসপাতালের তৃতীয় তলার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে কাটাছেঁড়া (সার্জারি) পুরুষ ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করছেন এবাদুর রহমান। এরই সূত্র ধরে প্রায়ই তিনি রোগীদের কাটাছেঁড়ার সেলাই দেন। এ ছাড়া হাসপাতালে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন এবাদুর। ওয়ার্ডে নতুন কেউ ভর্তি হলে তিনি রোগীর স্বজনদের ওষুধ থেকে শুরু করে সেলাইয়ের সুতা, সুই, হাতের গ্লাভসসহ বিভিন্ন ওষুধ ও সামগ্রীর ফরমাশ দেন। পরে সেগুলো ফার্মেসি থেকে কিনে আনতে হয় রোগীর স্বজনদের।

ফরমায়েশে রোগীর জন্য দুটি সেলাইয়ের সুতার প্রয়োজন হলে এবাদুর রহমান অধিক পরিমাণে লিখে দেন। সেলাইয়ের প্রতিটি সুতা হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানগুলো থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনতে হয়। পরে সেগুলো ওয়ার্ডে এনে বুঝিয়ে দেওয়ার পর একটি বা দুটি সুতা কাজে লাগিয়ে বাকিগুলো রেখে দেন এবাদুর। সেগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আবার ওষুধের দোকানগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এতেই হাত ঘুরে সুতা বিক্রি করে টাকা চলে আসে এবাদুরের পকেটে। এ ছাড়া চিকিৎসকের বদলে অদক্ষ হাত দিয়ে সেলাই দেওয়ায় অনেক সময় রোগীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন। আবার হাত পরিষ্কার না করে এবং গ্লাভস না লাগিয়ে ক্ষতস্থানে হাত দেওয়া এবং সেলাই দেওয়ায় অনেক সময় রোগীর ‘ইনফেকশন’ হয়।

ওই ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, হাসপাতালের শয্যায় আব্দুল করিমের মাথা কামিয়ে নিচ্ছিলেন এবাদুর রহমান। এর একটু পর এসে যোগ দেন সাইফুল ইসলাম। এ সময় এবাদুর রহমানকে রোগীর হাতে স্যালাইন পুশ করতেও দেখা যায়। এবাদুর ও সাইফুল দুজনে আব্দুল করিমের মাথায় সেলাই দিতে দিতে গল্প করতেও দেখা যায়। তবে ভিডিও চিত্রে কোনো শব্দ শোনা যায়নি।

জানা যায়, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের নিজ করমসি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল করিম (৫০)। ১২ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে জায়গা সম্পত্তির বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন তিনি। পরে তাঁকে ওই দিন দুপুরের দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় আব্দুল করিমকে। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পর আব্দুল করিমের মাথায় সেলাই দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। তবে ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসকের বদলে সেলাই দেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবাদুর রহমান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *