কোরআন পুড়ানোর অভিযোগে রাতভর তুলকালাম, দুই শিক্ষক আটক

সিলেট

পবিত্র কোরআন শরিফ পুড়ানোর অভিযোগে সিলেটে আখালিয়া রাতভর তুলকালাম ঘটে গেছে। এমন অভিযোগে রবিবার মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। এরপর অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

আটককৃতরা হলেন, নগরের আখালিয়ার ধানুহাটারপাড়স্থ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যান নুরুর রহমান (৫০) এবং একই কলেজের শিক্ষক মাহবুব আলম (৪৫)।

জানা যায়, রোববার (৬ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে হঠাৎ উত্তাল হয়ে পড়ে সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকা। আখালিয়ার ধানুহাটারপাড় এলাকার আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআন শরিফ পুড়ানোর অভিযোগ তুলে স্থানীয় কয়েকজন।

এই দুই শিক্ষক অনেকগুলো পবিত্র কোরআন পুড়িয়েছেন এমন অভিযোগ ছড়িয়ে পড়লে শত শত মানুষ উত্তেজিত হয়ে আইডিয়াল স্কুলের ফটকে জড়ো হয়ে তাদের মারধর করে। উত্তেজিত জনতা কলেজের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে।

খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যানকে প্রতিষ্ঠানটির একটি কক্ষে আটকে রাখে। এসময় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিসুর রহমান কামরান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা চালান।

তবে পুলিশ ও কাউন্সিলরের এই চেষ্টায় জনতা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। রাত ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বিশেষ টিম সিআরটি এবং জালালাবাদ ও  কোতোয়ালি থানার অতিরিক্ত পুলিশ এবং র‍্যাব-৯ ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

এ সময় উত্তেজিত জনতার একাংশ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।

পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এসময় পুলিশ ও উপস্থিত জনতার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এতে পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। পুলিশের গাড়িও ভাংচুর করে জনতা।

রাত ২ টার দিকে ধীরে ধীরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন উত্তেজিত স্থানীয় জনতা। এরপর পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে পুলিশ। এসময় নুরুর রহমান ও মাহবুব আলমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে- রবিবার বিকালে সিলেটের জালালাবাদ থানাধীন ফতেহপুর মাদ্রাসার শিক্ষক ইসহাক আহমদ এক কার্টুন ও এক বস্তা ভর্তি কোরআন শরিফ দিয়ে যান নুরুর রহমানের কাছে।

কোরআন শরিফ দেওয়া ইসহাক সিলেট বেতারের ক্বারি ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের খন্ডকালীন শিক্ষক।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম) বলেন, রবিবার রাত ১০টার দিকে নুরুর রহমান ও মাহবুব আলম বস্তার ৪৫টি কোরআন শরিফ কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে শুরু করেন।  এসময় স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং এ দুজনকে মারধর শুরু করেন।

তিনি বলেন, এক পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ওই এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং জনতার হাত থেকে নুর ও মাহবুবকে উদ্ধার করে। এসময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের দিকে ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয় এসময়। আহত পুলিশ সদ্যসদ্যরা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও শর্টগান ব্যবহার করে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, রাতে ওই এলাকায় কোতোয়ালি থানা, জালালাবাদ থানা, সিআরটি ও গোয়েন্দা পুলিশের ৫ শতাধিক সদস্য কাজ করে। এছাড়া পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব-৯ এর একটি টিমও কাজ করে।

সকালে আজবাহার আলী শেখ আরও বলেন,  কোরআন শরিফ পুড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্তরা বলছে, তাদের ভুল হয়ে গেছে। একেক সময় একেক অজুহাত দিচ্ছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। আর তাদেরকে যে ব্যক্তি কোরআন শরিফ দিয়ে গেছে তাকে আমরা গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি। তাকে গ্রেফতার করলে বিষয়টি আরও খোলাসা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *