সিলেটের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত ক্বীনব্রিজ। সুরমার বুকে দন্ডায়মান এই ব্রিজের সাথে ঐতিহ্যের পাশাপাশি জড়িয়ে রয়েছে সিলেটবাসির আবেগ। দৃষ্টিনন্দর এই ব্রিজ বিশ্বজুড়ে সিলেটের স্মারকের হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু সিলেটবাসির আবেগের এই ব্রিজ এখন অনেকটা আবর্জনার ব্রিজে পরিণত হয়েছে। ব্রিজের বুকে এখন প্রতিদিন বসে জমজমাট বাজার। ব্রিজের উত্তর অংশে সকাল থেকেই ভাসমান নানান পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ঝাঁপিতে থাকে ফলমূল, সবজি, বইপত্র, মনোহারী জিনিসপত্র থেকে নিয়ে আশ্চর্য মলমসহ ওষুধপত্র। সম্পূর্ণ অবৈধ এই বাজার নিয়ে কোনো রা নেই যেন কারো।
সকাল থেকে বাজার বসলেও দুপুরের পর তা জমতে শুরু করে। ব্রিজ অভিমুখে আসা যাওয়া করা নদীর দুই পারের সাধারণ লোকজনই মূলত এখানে ক্রেতা। তারা লম্বা সময় নিয়ে দরদাম করেন, কেউ কেনাকাটা করেন আবার কেউ দাড়িয়ে ক্রেতা বিক্রেতার দর কষাকষি উপভোগ করেন। ফলে এই বাজার ঘিরে প্রতিদিন ব্রিজের মুখে যানবাহনের জটলা লেগেই থাকে। ব্রিজটি খাড়াভাবে ঢালু। এতে রিকশা ভ্যানসহ হালকা গতির যানবাহন নামার সময় এই বাজার কেন্দ্রিক জটলায় প্রতিদিনই ছোটোখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। এসব কারণে এখানে হট্টগোল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেট সিটি কর্পোরেশন ব্রিজটি কেবল পদচারী সেতু হিসেবে ব্যবহারের জন্য ঘোষণা দেয়। এরপর তারা এতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু নগরবাসির চাপে মাত্র ৫২ দিন পরেই ব্রিজটি তারা আবারও হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দিতে বাধ্য হয়। তখন থেকেই এখানে যান, মানুষ আর বাজার মিলে এক জগাখিচুড়ি অবস্থা বিরাজ করছে।
ক্বীনব্রিজের সামনে প্রায়ই দিনে দুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা শোনা যায়। ছিনতাইকারীরা লোকজনের জিনিস কেড়ে নিয়েই দ্রুত এই বাজারের ক্রেতাদের সাথে মিশে যায়। ফলে কে ক্রেতা আর কে ছিনতাইকারী তা ধরা তাৎক্ষণিক দুষ্কর হয়ে পড়ে। বাজার ঘিরে জটলা আর ময়লার স্তুপে ঐতিহ্যের স্মারক দৃষ্টিনন্দন এই ব্রিজটি কেবল কাঠামো ছাড়া পুরোটাই অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত। যানবাহনের বাইরে সবচেয়ে বেশি লোকজন এই ব্রিজ দিয়ে হেঁটে নদী পারাপারের জন্য ব্যবহার করে থাকেন। সুরমার উত্তর পারে একেবারে ব্রিজের মুখেই আদালত, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশন ভবনের অবস্থান। ব্রিজ পেরিয়েই সহজেই আসা যায় বলে এসব অফিসের কারণে এই ব্রিজের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতা লোকজনের কাছে একটু বেশি। ঐতিহ্য আর প্রয়োজন মিলে এই ব্রিজের প্রতি সিলেটবাসির আবেগ বেশ গভীর, কিন্তু তাদের এই আবেগ আজ ভুলণ্ঠিত। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা অনেকটাই নির্বিকার।
১৯৩৬ সালে সুরমা নদীর ওপর তৎকালীন রেলওয়ে বিভাগ ১ হাজার ১৫০ ফুট দীর্ঘ ও ১৮ ফুট প্রশস্ত দৃষ্টিনন্দন এই স্টিলের ব্রিজ নির্মাণ করে। সিলেট শহর তখন আসাম প্রদেশের অধীনে ছিল। সেসময় এর গভর্ণর ছিলেন স্যার মাইকেল ক্বীন। তার নামেই ক্বীন ব্রিজ নামকরণ করা হয়।
শেয়ার করুন