ক্বীনব্রিজ যেন ‘নিত্যপণ্যের বাজার’

সিলেট

অনেকদিন থেকেই ক্বীনব্রিজে যান চলাচল বন্ধ। কেবল সাইকেল ও মোটরসাইকেল এবং হেঁটে এই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করা যায়। সংস্কারের পর ব্রিজের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই সুযোগে বিজ্রের দুইদিক দখলে চলে গেছে হকারদের। তাই সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এই ব্রিজ এখন বাজার বলা চলে। বাজরের যেমন দুইদিকে বিক্রেতারা পন্য নিয়ে সারিবদ্ধভাবে বসেন মাঝখানে পয়ে হাঁটা সরু পথ এখানেও এখন অনেকটা তা-ই। দুইদিকে বসেছেন বিক্রেতারা মাঝখান দিয়ে লোকজন হেঁটে ব্রিজ পার হচ্ছেন, মোটরসাইকেল, বাই সাইকেল যাচ্ছে। যেতে যেতে তারা থেমে বাজার সেরে নিচ্ছেন, দরদাম করছেন। হঠাৎ দেখলে এটা যে কোনো ব্রিজ তা বুঝার উপায় নেই। এতে যাত্রীদের চলচলে যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনি চুরি পকেটমারের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে অনেক। সন্ধ্যার পর তা আরও প্রকট আকার ধারণ করে।

সরেজমিন দেখা যায়, ক্বীনব্রিজের উত্তর দিকের প্রবেশ মুখ থেকে পুরো ব্রিজে হকাররার দুইদিকে পণ্য নিয়ে বসেছেন। ব্রিজের মুখে কিছুটা প্রশস্ত থাকলেও মূল ব্রিজের লোহার অংশ চাপা হওয়ায় সেখানে ক্রেতা, বিক্রেতা আর পথচারীদের চাপে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। চিৎকার, চেঁচামেচি আর ঠেলাধাক্কায় মফস্বলের কোনো সাপ্তাহিক বাজারের যেন আবহ তৈরি হয়েছে পুরো ব্রিজে।

ব্রিজের দুইপাশে টেবিল, টুল, বড়ো বাকসো, ছোটো হাতগাড়ি নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা, এর সামনে ক্রেতারা দরদাম করছেন। বিক্রি করা এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে মেহেদী, হাতঘড়ি, ছেলেদের আন্ডার গার্মেন্টস, নারী ও বাচ্চাদের মালা, অলংকার, শার্ট, প্যান্ট, শর্ট প্যান্ট, ট্রাউজার থেকে নিয়ে লেবু, শাক সবজি, পান-সুপারি। এছাড়া রমজান উপলক্ষ্যে খেজুর নিয়ে বসতে দেখা গেছে বেশ কয়েকজন বিক্রেতাকে। তারা ঝাপিতে এবং হাতগাড়িতে করে খেজুর বিক্রি করছেন।

দুইদিকে ক্রেতা বিক্রেতার দখলের পর মাঝখানে অল্প জায়গা দিয়ে পথচারী ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। এতে তৈরি হয়েছে বিরাট জটলার। জটলার চাপে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন মোটরসাইকেল আরোহীরা। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় এই ব্রিজে শুধু পায়দল এবং মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি আছে। পথচারীরা ধাক্কাধাক্কি করে চললেও বাইকারদের সেই সুযোগ নেই। ব্রিজটি অনেক ঢালু হওয়ায় উঠতে গিয়ে ভিড়ের জন্য অনেক বাইকের স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন আরোহীরা। কোথাও কোথাও মানুষের ধাক্কায় বাইক কাৎ হয় যেতেও দেখা গেছে।

দক্ষিণ সুরমার মবিল ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির আকাশ জানান, তিনি বাইক নিয়ে দুই মিনিটের মধ্যে ক্বীনব্রিজ পার হয়ে আসেন সবসময়। মাঝেমধ্যে যানজট থাকলে চার থেকে পাঁচ মিনিট লাগে। কিন্তু গতকাল দুপুর একটার দিকে প্রায় আধাঘণ্টার উপর লেগেছে ক্বীনব্রিজ পার হতে। তিনি বলেন হকার আর মানুষের এত ভিড় বাইক চলাচলের কোনো উপায়ই নেই এরকম অবস্থা এখন ব্রিজে।

আকাশ বলেন, বাইকের স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মানুষ চিৎকার করছে, আবার নেমে যে ঠেলে এগুনো যাবে তারও উপায় নেই, খুব বিব্রতকর অবস্থা। ঈদের আগেই যদি এই অবস্থা হয় তবে পরে কী হবে ভেবে কিনারা করা যাচ্ছে না। তারউপর ব্রিজের মুখেই পুরো রাস্তা জুড়ে কোর্ট পয়েন্ট ছাড়িয়ে হকারদের দখলে। ফলে যাত্রী পথচারীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।

তিনি বলেন, লালদীঘি হকার মর্কেটে অনেক সুন্দর করে বসা ও বাজারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে দেখেছি। হকারদের ওখানে বসতে বাধ্য করা গেলে ক্রেতারা এমনিতেই সেখানে বাজার করবেন। এতে রাস্তাঘাট যেমন সুন্দর থাকবে বাজারও সুন্দর হবে।

এদিকে, হকারদের এই দখলে পথচারীরা অনেকটা বিপাকে পড়েছেন উল্লেখকরে এক পথচারী বলেন, ক্বীনব্রিজ যান চলাচল বন্ধ করে হাঁটার জন্য দিয়ে দেওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু হকারদের এই দখলে এখন তো হাঁটারই উপায় নেই। ঠেলা ধাক্কা দিয়ে চলতে হচ্ছে। নারী এবং বৃদ্ধরা এই ঠেলাঠেলিতে কীভাবে চলবে। তাছাড়া পকেটমারের আশঙ্কা তো আছেই।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *