বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যেনো এক সত্যিকারের ফিনিক্স। ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে কখনো জিতিয়েছেন আবার কখনো মাঠ ছাড়তে হয়েছে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে। ভালো করতে না পারায় বাদ পড়েছেন দল থেকে তেমনি নীরবে আবারও নিজেকে ঝালিয়ে বাইশগজ মাতিয়েছেন লাল সবুজের জার্সিতে। তবে যতটা দিয়েছেন দেশের ক্রিকেটকে ততটা প্রশংসা কি পেয়েছেন রিয়াদ?
২০২৩ এর মার্চ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ৩ ম্যাচে ৭১ রান। বড্ড স্লো রিয়াদ। তার যায়গায় নিশ্চই ভালো করবেন অন্যরা। যায়গা ছাড়তে হলো মাহমুদউল্লাহকে। না! শূণ্যস্থান পূরণ হচ্ছেনা। দীর্ঘ ছয় মাস পর নিউজিল্যান্ড সিরিজে আবারও ডাক পড়লো রিয়াদের। লাল সবুজের জার্সিতে ততদিনে পেরিয়েছে প্রায় দেড় যুগ। তবুও দলের বাইরে থাকা সেই ছয় মাসে নেই কোনো মিডিয়া স্ট্যান্ট। নীরবে শুধুই ঝালিয়েছেন নিজেকে।
ভরসা জাগিয়ে যায়গা করে নেন ২০২৩ বিশ্বকাপে। প্রথম ম্যাচে দল জেতে, ব্যটিংয়ে রিয়াদের সিরিয়াল আসেনা। দ্বিতীয় ম্যাচে দল হারলেও একাদশে রিয়াদের যায়গা হয়না। তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়েই পারফর্ম করেন কিন্তু সঙ্গী সেই পরাজয়। পরের ম্যাচেও রান পান ঠিকই কিন্তু ভাগ্য বদলায় না দলের। ভাগ্য বদলায় না রিয়াদেরও। শুরু মাঝ কিংবা এই শেষ ম্যাচটার কথাই ধরুন না। ওয়ার্নার পার্কে ৬৩ বলে ৮৪ রানের কি দাপুটে ফিনিশিংয়ে দলকে পৌঁছে দিলেন ৩২১ এ। সেই ম্যাচও হারতে হলো বাংলাদেশকে। শুধুই যেন রিয়াদকে মৃয়মান করতে।
৫০ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ার থেমেছে তিন বছর আগে। টি-টোয়েন্টি ছেড়েছেন গত অক্টোবরে। থেকে গেছে শুধু ওয়ানডে। যে ওয়ানডেতে ২৩৮ ম্যাচে ক্যারিয়ারে ব্যাট করেছেন ২০৮ ইনিংসে। সেঞ্চুরি ৪টি, ফিফটি ৩২টি। বাংলাদেশের ক্রিকেট আর রিয়াদের ব্যাটিং পজিশন বিবেচনায় খুব মন্দ কি? যদি তাই হয় তবে এখনও কেন আসেনি তার যায়গায় আরও ভালো কেউ?
ফিনিশার নাকি সাইলেন্ট কিলার নাকি শুধুই একজন সাইলেন্ট ক্রিকেটার? নীরবে হয়তো ক্যারিয়ার জুড়ে সেই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজে চলেছেন গত সতের বছর ধরে। কখনও ব্যাট হাতে নিজেই দিয়েছেন জবাব। কখনও ধুঁকেছেন দলকে সঙ্গে নিয়েই। খারাপ করলেই শুনতে হয়েছে বুড়িয়ে যাওয়ার গালি ভালো করলে অবশ্য ওতোটাও জোরে রিয়াদের জন্য বাজেনি তালি। তবুও বার বার দ্রুতই মিডল অর্ডার ওপেন হয়ে যাওয়া দলটার হাল ধরেছেন। কখনও দলকে বাঁচাতে বাইতে হয়েছে ধীরে, কখনো বা জোরে। দক্ষ নাবিকের মত ঢেউয়ের ভাঁজে হারিয়ে গিয়েও আবার উঠেছেন জেগে। সত্যিকারের ফিনিক্স পাখি যেমন হয়।
ছক্কা মেরে দলকে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে তোলার পর ব্যাকগ্রাউন্ডে হিরো লেখা ঐ ছবিটা কি শুধুই কাকতালীয়? নাকি বাংলাদেশের ক্রিকেটে সত্যিকারের এক হিরোই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ? সেই প্রশ্নের উত্তরও হয়তো ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন তবে বাইশগজে রিয়াদের গল্পটা সত্যিই মিলে যায় শাহরুখের সেই বিখ্যাত সংলাপের সাথে-কাভি কাভি জিতনে কেলিয়ে কুছ হারনা ভি পাড়তা হ্যে, ওর হারকার জিতনে ওয়ালেকো বাজিগার ক্যাহেতেহে।
শেয়ার করুন