কেমন দেখতে চান, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার? এ নিয়ে গত শুক্রবার (২০ অক্টোবর) ছিল দলটির ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির কাছে সাধারণ মানুষের প্রস্তাব পাঠানোর শেষ দিন। কমিটির আহ্বায়ক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সংসদ সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক জানান,
এরই মধ্যে বহু প্রস্তাব তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এখন চলছে যাচাই-বাছাই। এর আগে গত ৩ অক্টোবর উপকিমিটির পক্ষ থেকে ইশতেহারের জন্যে প্রস্তাব চেয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল।
তৃণমূলের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া প্রসঙ্গে ড. রাজ্জাক বলেন, গণমানুষের দল আওয়ামী লীগের ইশতেহার কেবলমাত্র একটি দলীয় ইশতেহার নয়। এটি প্রকৃত অর্থে গোটা জাতির ইশতেহার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করে সেটি আওয়ামী লীগের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার প্রতিটি নির্বাচনী ইশতিহারে জাতিকে প্রদত্ত প্রতিটি অঙ্গীকার শতভাগ প্রতিপালন করেছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইশতেহারেই সরকারের নির্দিষ্ট মেয়াদের বাইরে দীর্ঘমেয়াদি নানা উন্নয়নের পথনকশা ছিল। এর প্রতিটিই অত্যন্ত সুচারুভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।
তবে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, এবারের ইশতেহার হবে স্মার্ট এবং গণমুখী। তারা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে মানুষের কাছে আধুনিক প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি দৃশ্যমান যে উন্নয়নগুলো হয়েছে তার মাধ্যমে আগামী দিনে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। আগামী দিনের যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থানটাই হবে এবারের মূল প্রতিপাদ্য। স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য হবে শিল্পকারখানা স্থাপন করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, মানুষের আয় বৃদ্ধি করা।
আওয়ামী লীগ গণমানুষের ইচ্ছার কথা জানতে আগ্রহী উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির সদস্য সচিব ড. সেলিম মাহমুদ জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করে সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেই জনগণের মতামত চাওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ইশতেহার দিয়েছিল। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইশতেহার ছিল ‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহার ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।
অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন করে আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আদালত, হাসপাতাল, ব্যবসায়িক কার্যক্রম সকল কিছুই আজ ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পাদন হচ্ছে। এতে করে জনগণের ভোগান্তি যেমন কমেছে, একই সঙ্গে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পুরোপুরি সাফল্য দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। জঙ্গিবাদকে দমন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। বিএনপি-জামায়াত সৃষ্ট রাজনৈতিক সহিংসতা দমন করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সফলতা দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে সফলতার সঙ্গে কাজ করেছে। দলীয় সরকারের অধীনে গণতান্ত্রিক উপায়ে দেশের স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ অনুযায়ীও আওয়ামী লীগ সরকার কাজের মাধ্যমে ইশতেহারের পূর্ণতা দিয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প দেশের অর্থায়নে বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্ণফুলী টানেল, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সারাদেশে অসংখ্য সড়ক-মহাসড়ক, সেতু, ওভারপাস নির্মাণ করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ।
সেই সময় পেরিয়ে ডিজিটাল যুগের মধ্যেই স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি ধরে এগিয়ে চলার সময় এখন। সেই বিবেচনায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘গ্রাম হবে শহর’ স্লোগান থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মূল স্লোগান হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।
শেয়ার করুন