বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদের সবচেয়ে আলোচিত খতীব ছিলেন জকিগঞ্জের গর্ব মাওলানা উবায়দুল হক র.। তাঁর পিতাও ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা সংস্কারক আলিমে দ্বীন। প্রকাশ-প্রচার তথা লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে শিক্ষাদীক্ষা দাওয়াত তাবলীগ ও সংস্কারমূলক কাজ করে গেছেন আজীবন। যদিও প্রচারবিমুখ অবস্থায়ই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন, কিন্তু ছিলেন প্রগাঢ় পাণ্ডিত্যের অধিকারী একজন আলিমে দ্বীন। আধ্যাত্মিকতায় ছিলেন আশরাফ আলী থানভী র. এর খলীফা। ছিলেন কিংবদন্তী। শিক্ষা অর্জন করেছেন উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ দ্বীনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ-এ। শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন সেই সময়ের পৃথিবীখ্যাত উলামায়ে কেরামের।
দারুল উলুম দেওবন্দ-এ সুনানে আবু দাউদ-এর পাঠগ্রহণ করেছেন আল্লমা আনওয়ার শাহ্ কাশ্মীরির কাছ থেকে। দারুল উলুম দেওবন্দ-এ সুনানে আবু দাঊদ-এর পাঠগ্রহণকালে তিনি আল্লামা আনওয়ার শাহ্ কাশ্মীরী সাহেবের দরসের তাকরীরগুলো (লেকচারসমগ্র) লিখে সংগ্রহ করেন আরবীতে। রূপ দেন প্রকাশযোগ্য পাণ্ডুলিপির। আল্লামা আনওয়ার শাহ্ কাশ্মীরির দরস মানেই যে তা রত্নতুল্য—সেটা বলাই বাহুল্য। মাওলানা জহুরুল হক জকিগঞ্জী সিলেটী সেই মূল্যবান দরসসমগ্রকে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এর আগেই তিনি আল্লাহর প্রিয় হয়ে যান। অতঃপর সেই পাণ্ডুলিপিটি আসে তাঁর সুযোগ্য পুত্র উবায়দুল হক-এর কাছে। তিনি সেটা প্রকাশের নিয়ত করলেও জীবদ্দশায় তা আর সম্ভব হয়ে ওঠে নি। তাঁর ইনতিকালের পর বংশানুক্রমে পাণ্ডুলিপিটি হস্তগত হয় খতীবপুত্র (সিলেট দরগাহ মাদরাসার মুহাদ্দিস) মাওলানা আতাউল হক জালালাবাদীর। তিনি এ পাণ্ডুলিপিতে কিছুটা কাজ করেন। ইতোমধ্যে খতীব মাওলানা উবায়দুল হক সাহেবের গ্রামের ইংল্যান্ডপ্রবাসী তরুণ আলিম, সিলেট আঙ্গুরা মাদরাসার সাবেক শিক্ষক মাওলানা মাহফুয আহমদ আনওয়ার শাহ্ কাশ্মীরী র. এর জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণাকর্মের একপর্যায়ে জানতে পারেন এই পাণ্ডুলিপিটির কথা। তখন তিনি খতীবপু্ত্র মাওলানা আতাউল হক জালালাবাদীর কাছ থেকে ১১২ বছর পূর্বে সংকলিত এ পাণ্ডুলিপিটি সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় কিছু কাজ ও টীকাটিপ্পনী সংযোজন কর প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আলহামদুলিল্লাহ, অবশেষে জর্ডানের প্রসিদ্ধ প্রকাশনী দারুল ফাত্হ গত মাসে এটিকে দুই খণ্ডে ১৩৫৪ পৃষ্ঠায় প্রকাশ করেছে। তুরস্কের বিশিষ্ট গবেষক আলিম বইটির নামকরণ করেছেন ‘আলআমালী আলা সুনানি আবি দাঊদ’। এর দ্বারা মাদরাসাশিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ আরবি জানা যে কেউ অভাবনীয় উপকৃত হতে পারবেন।
আমরা গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করছি।