ঘরে বসেই নতুন পাসপোর্টের আবেদন করবেন যেভাবে

জাতীয়

বিদেশে উচ্চশিক্ষা, ভ্রমণ কিংবা চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য প্রথমেই যে জিনিসটির প্রয়োজন হয় তা হলো পাসপোর্ট। এই পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া অনেকের কাছে জটিল মনে হলেও এটি তেমন জটিল নয়। বর্তমানে বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে ইলেকট্রনিক বা ই–পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এখন যে কেউ ঘরে বসে নিজেই নিজের ই–পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আমরা জানবো কারো সাহায্য ছাড়াই ঘরে বসে কিভাবে ই–পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায়, এর জন্য কি কি নথি লাগে। ই–পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম ও খরচ, কত দিনে পাওয়া যায় ইত্যাদি সম্পর্কে।

কেননা, একটি ই–পাসপোর্ট আবেদন জমা দেওয়ার (সাবমিট করা) পর যদি দেখেন, কোথাও ভুল হয়েছে, তাহলে আপনি তা সংশোধন করার সুযোগ পাবেন না। সেই সঙ্গে, একটি ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে একবারই ই–পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায়।

(১) আবেদন ফর্ম পূরণ
প্রথমে আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অনলাইন পোর্টালে। ওয়েবসাইটে ঢুকে ‘ডিরেক্টলি টু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন’–এ ক্লিক করতে হবে। সেখানে শুরুতেই অ্যাপ্লাই অনলাইন ফর ই-পাসপোর্ট/রি-ইস্যু বাটনে ক্লিক করে সরাসরি আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। তবে আবেদন করার আগে দেখে নিতে হবে, ই-পাসপোর্ট আবেদনের পাঁচটি ধাপ।

ই-পাসপোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.epassport.gov.bd 

আবেদনপ্রক্রিয়ার ধাপসমূহ
* রেজিস্ট্রেশন
যদি আপনি নতুন ব্যবহারকারী হন, তাহলে “Create Account” বা “নতুন একাউন্ট তৈরি করুন” অপশনে ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশন করবেন। রেজিস্ট্রেশনের সময় আপনাকে নিচের তথ্য দিতে হবে:
* নাম
* ইমেইল আইডি
* মোবাইল নম্বর
* পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হবে

এরপর আপনার মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) যাবে, যা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে।

*ফর্ম পূরণ
লগইন করার পর আপনাকে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। এই ফর্মে নিচের তথ্যগুলো চাওয়া হয়:
– ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা)
– জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর (NID)
– পেশাগত তথ্য (যদি প্রযোজ্য হয়)
– পাসপোর্টের ধরন নির্বাচন (৫ বছর বা ১০ বছরের মেয়াদ)

*ফর্ম সাবমিশন ও প্রিন্ট
আপনি যখন অনলাইনে ফর্ম পূরণ করবেন, তখন আপনাকে তা যাচাই করতে হবে। যাচাই করার পর ফর্মটি সাবমিট করে তার প্রিন্ট কপি সংরক্ষণ করুন। এটি পরবর্তীতে প্রয়োজন হবে।

(২) পাসপোর্ট ফি জমা করা

* ফি নির্ধারণ
আপনার ই-পাসপোর্টের জন্য ফি নির্ধারিত থাকে। এর উপর নির্ভর করে আপনার জমা দিতে হবে।

* ফি জমা দেওয়ার পদ্ধতি
আপনি নিচের যেকোনো মাধ্যম দিয়ে পাসপোর্ট ফি জমা দিতে পারবেন:
– ব্যাংক ডিপোজিট: নির্দিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে সরাসরি জমা দিতে পারেন।
– অনলাইন পেমেন্ট: ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং (যেমন বিকাশ, নগদ), অথবা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট করতে পারেন।

(৩) বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান
*নির্ধারিত কেন্দ্রে উপস্থিতি: আপনার ফর্ম এবং ফি জমা দেওয়ার পর আপনাকে একটি তারিখ দেওয়া হবে। সেই তারিখে নির্দিষ্ট পাসপোর্ট অফিস বা ই-পাসপোর্ট সেন্টারে উপস্থিত হতে হবে।

বায়োমেট্রিক তথ্যের দিন আপনার সাথে নিচের কাগজপত্রগুলো নিয়ে যাবেন:
– অনলাইন আবেদন ফরমের কপি
– পাসপোর্ট ফি পরিশোধের রিসিট
– যে বাসায় থাকেন সে বাসার বিদ্যুৎ বিলের কপি
– নিজের এবং পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি বা জন্ম সনদ
– আগের পাসপোর্ট (যদি থাকে)
– ১৮-এর কমবয়সীদের জন্য জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট, বাবা-মায়ের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে।
অবশ্যই মূল কাগজপত্রগুলোও সঙ্গে নেবেন।

*বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া
একটি নির্দিষ্ট কক্ষে গিয়ে ছবি ও আঙুলের ছাপের জন্য লাইনে দাঁড়াবেন। আপনাকে নিচের কাজগুলো করতে হবে:
-আপনার ছবি তোলা হবে
– আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট (সব আঙুলের ছাপ)
– চোখের আইরিশের ছবি
– স্বাক্ষর প্রদান
সব কাজ শেষে আপনাকে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসহ একটি রিসিট দেবে। পাসপোর্ট গ্রহণের সময় ডেলিভারির রসিদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক।

(৪) পাসপোর্ট সংগ্রহ

* পাসপোর্ট প্রস্তুতির সময়
বায়োমেট্রিক তথ্য জমা দেওয়ার পর পাসপোর্ট প্রস্তুতির জন্য কিছু সময় নেয়। সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ কর্মদিবস সময় লাগতে পারে, যদি দ্রুত সেবা না নেন।

* এসএমএস নোটিফিকেশন
আপনার পাসপোর্ট হয়ে গেলে আপনাকে মেসেজ করে জানাবে। এছাড়াও ই-পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে লগইন করেও আপনার পাসপোর্টের অবস্থা দেখতে পারবেন।

* পাসপোর্ট সংগ্রহ
এসএমএস পাওয়ার পর নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র এবং প্রাপ্তি স্লিপ দেখিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।

পাসপোর্ট প্রক্রিয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
– সব সময় ফর্ম পূরণ করার সময় সঠিক তথ্য প্রদান করবেন।
– ফি জমা দেওয়ার পর রশিদটি সাবধানে রাখুন।
– ছবি তোলার দিন পরিষ্কার পোশাক পরিধান করবেন এবং মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে (ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ডে ছবি তোলা হয়)।

খরচঃ 
বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সাধারণ (২১ কর্মদিবস) ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি (১০ কর্মদিবস) ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতীব জরুরি (২ কর্মদিবস) ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।

৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১২ হাজার ৭৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা। সব ফির সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। ১৮ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী আবেদনকারীরা কেবলমাত্র ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট পাবেন। উল্লেখ অতি জরুরি আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদন সঙ্গে আনতে হবে।

সুবিধাঃ 
ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে ই-গেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমেই ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাবে। ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে আঙুলের ছাপ যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। কোনো গরমিল থাকলে জ্বলে উঠবে লালবাতি। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও জানা যাবে সঙ্গে সঙ্গে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *