গেল এক বছরে একে একে নিখোঁজ হয়েছেন সিলেট বিভাগের ৮ যুবক। কেউ নিরুদ্দেশ হয়েছে পরিবারকে কিছু না জানিয়ে। আবার কেউ ঘর ছেড়েছিল তাবলিগ জামাতে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু গৃহত্যাগী এই যুবকরা আর ঘরে ফেরেনি।
শুরুতে হন্য হয়ে পরিবারের সদস্যরা খুঁজেছেন তাদেরকে। সন্ধান না পেয়ে এখন নিরবে পথচেয়ে আছেন তারা। তবে সম্প্রতি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর অভিযানে জঙ্গি তৎপরতার সাথে জড়িত ঘরছাড়া কয়েক যুবক আটকের পর উঠে এসেছে সিলেটের নিখোঁজদের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গত সোমবার র্যাব সদর দপ্তরে আটককৃতদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিপথগামী আরও ৩৮ যুবকের নাম প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেন সিলেট বিভাগের ৮ জন। যার মধ্যে সিলেটের ৭ জন ও সুনামগঞ্জের একজন।
সিলেট জেলার নিখোঁজ সাত যুবকের মধ্যে রয়েছেন- ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীরে শেখ আহমদ মামুন, একই এলাকার হাসান সায়িদ, সাইফুল ইসলাম, সাদিকুর রহমান ও সিলেট নগরীর সবুজবাগের তাহিয়াত চৌধুরী। এর মধ্যে মামুন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, সায়িদ ও সাইফুল মাদ্রাসাছাত্র, সাদিকুর একটি শরীরচর্চা কেন্দ্রের প্রশিক্ষক ও তাহিয়্যাত সিলেটের একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী। বাকি তিনজনের নাম পরিচয় এখনো সনাক্ত করা যায়নি।
র্যাবের দাবি- তারা জঙ্গিবাদে উদ্ধুদ্ধ হয়ে ঘর ছেড়েছিল। বর্তমানে তারা বান্দরবনের দুর্গম এলাকায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তাদেরকে আটকে অভিযান চলমান আছে।
এদিকে, সন্তানদের বিপথগামীতার এমন খবরে নতুন করে উদ্বিঘ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। এছাড়া ইতোমধ্যে আরও যেসব কিশোর ও যুবক নিখোঁজ হয়েছেন তাদের অভিভাবকরাও নিখোঁজ সন্তানদের দিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন।
জানা গেছে, গত বছরের ১৫ নভেম্বর তাবলিগে যাওয়ার কথা বলে ওসমানীনগরের দয়ামীরের চারযুবক ঘর থেকে বের হয়। এরপর আর ফিরেনি। একপর্যায়ে অভিভাবকরা তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে সিলেটের তাবলিগের মারকাজগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন- তাদের কেউই তাবলিগে যায়নি। এ ঘটনায় গত বছরের ২৭ নভেম্বর ওসমানীনগর থানায় একটি জিডি করা হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুজি করেও তাদের কোন সন্ধান পায়নি। একই দিন শাহজালাল উপশহরে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় তাহিয়াত। এ ঘটনায় তার বাবা কালাম আহমদ চৌধুরী ১৮ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
গত সোমবার সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব জানায়, নিখোঁজ হওয়া তরুণ-যুবকদের জঙ্গিগোষ্ঠী সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠায়। তাদেরকে শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়াও আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে তাদের রাজমিস্ত্রী, রংমিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। র্যাব আরও জানায়, প্রাথমিকভাবে নিখোঁজ ৩৮ জনের তথ্য পেয়েছে র্যাব। যাদের নাম ও ঠিকানা পাওয়া গেছে। বর্তমানে তাদের অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে। সেখানে তারা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ছত্রছায়ায় আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ বিষয়ে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, সংবাদ সম্মেলনে যে ৩৮ জন নিখোঁজ তরুণ ও যুবকের নাম প্রকাশ করা হয়েছে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন দুর্গম এলাকায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এমন তথ্য রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে। র্যাব সবসময় জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
শেয়ার করুন