কেউ হিজরতের নামে ঘর ছাড়া, কেউবা ঘরে বলে বের হচ্ছেন আবার কেউ বা না বলে। কিন্তু কোথায়,কার সাথে কিভাবে যাচ্ছেন- জানেন না কেউই।তবে এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব। তারা সিলেট বিভাগের ৮ যুবকসহ এমন ৩৮ জনের নামের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যারা যোগ দিয়েছে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সাথে। এই সংগঠনের তালিকায় সিলেটি যুবকদের সংখ্যা বাড়ছেই।
সম্প্রতি ১৯ জেলায় পঞ্চাশের ওপরে নিরুদ্দেশ যুবক জঙ্গিদের সাথে যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের নামসহ একটি তালিকা প্রকাশ হয়েছে। সেই তালিকায় নাম আছে সিলেট বিভাগের ৮ যুবকের। তাদের মধ্যে কেউ নিরুদ্দেশ হয়েছেন পরিবারকে কিছু না জানিয়ে, আবার কেউ ঘর ছেড়েছিলেন তাবলিগ জামাতে যাওয়ার কথা বলে। তারা আর ঘরে ফিরেনি এখনো।
র্যাব সদর দপ্তরে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলন করে বিপথগামী যুবকদের নাম প্রকাশ করে। তারমধ্যে সিলেট জেলার ৭ ও সুনামগঞ্জের একজন। নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন তারা।
সিলেট জেলার নিখোঁজ সাত যুবকের মধ্যে রয়েছেন, ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীরে শেখ আহমদ মামুন, একই এলাকার হাসান সায়িদ, সাইফুল ইসলাম, সাদিকুর রহমান ও সিলেট নগরীর সবুজবাগের তাহিয়াত চৌধুরী।
এরমধ্যে মামুন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, সায়িদ ও সাইফুল মাদ্রাসাছাত্র, সাদিকুর একটি শরীরচর্চা কেন্দ্রের প্রশিক্ষক ও তাহিয়্যাত সিলেটের একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী। বাকি তিনজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে, শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন সিলেটের ও দুজন সুনামগঞ্জের। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার সকাল ১১টায় বান্দরবান জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
জানা যায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সাতজন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের তিনজন ছিলো। এদের মধ্যে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ফজলুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আহম্মেদ জনু (২৭), গোলাপগঞ্জের আতিকুল আলমের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক বাপ্পি (২৩), সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মৃত সৈয়দ আবুল কালামের ছেলে সৈয়দ মারুফ আহমেদ মানিক (৩১), ছাতক উপজেলার আব্দুস সালামের ছেলে রুফু মিয়া (২৬)।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বিয়ানীবাজার ফজলুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আহম্মেদ জনু (২৭)। তিনি ২০০৩ সালে নগরের শাহপরান থানার পীরেরবাজার এলাকার অধিবাসী।
জানা যায়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় নিখোঁজ হন। এ ব্যাপারে তার ভাই দবির আহমদ শাহপরান থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়রী করেন (নং-১৫৩৪/ ২৭/৯/২০২২)।
অপর দিকে, বন্ধুর বাসায় ‘হিজরতের’ কথা বলে সিলেট থেকে ঘর ছাড়া আরেক তরুণের সন্ধান পাওয়া গেছে দুর্গম পাহাড়ে। তার নাম আবদুর রাজ্জাক খান ।
জাতীয় একটি দৈনিকের সংবাদে জানা যায়, জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারক্বীয়া (যার বাংলা অর্থ পূর্ববর্তী হিন্দের সাহায্যকারী দল) যোগ দিয়ে ওই তরুণ পার্বত্য এলাকার দুর্গম অঞ্চলে পাহাড়ি বিচ্ছিন্ন সংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তবে রাজ্জাক নিখোঁজের পর জঙ্গি দমনে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র কয়েকটি গণমাধ্যমকে বলেছিল, তালেবানের হয়ে যুদ্ধ করতে আফগানিস্তানে গেছেন তিনি।
সিলেট নগরের লামাবাজার এলাকায় ভাইয়ের বাসায় থাকতেন ২০ বছর বয়সী আবদুর রাজ্জাক। তিনি মদন মোহন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। ‘বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছি, দুদিন পর ফিরে আসব’—বড় ভাই সালমান খানকে এ কথা বলে রাজ্জাক হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যান গত ২৫ মার্চ। গত ১ এপ্রিল সিলেটের কোতোয়ালি থানায় নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন রাজ্জাকের বড় ভাই।
রাজ্জাকদের আদি বাড়ি কুমিল্লার দক্ষিণ থানায়। তবে ছোটবেলা থেকেই সিলেটে ভাইয়ের বাসায় থেকে পড়ালেখা করতেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী মিডিয়া কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শেয়ার করুন