কখনো ফগার মেশিন দিয়ে, আবার কখনো স্প্রে মেশিন দিয়ে ছিটানো হচ্ছে ঔষধ। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমও চলে সময় সময়। কিন্তু এতো আয়োজনের পরও সিলেট নগরে কমছে না মশার উপদ্রব।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সকল উদ্যোগের চেয়ে যেন ‘শক্তিশালী’ হয়ে মশা। মশার উৎপাতে দিনরাত সমানভাবে যন্ত্রণাভোগ করতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
আর সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, মশা নিধনের জন্য তাদের কোন জনবলই নেই। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে একযোগে মশক নিধন অভিযান চালাতে হলে প্রয়োজন অন্তত ১৫০ জন কর্মী। কিন্তু দুইজন স্প্রে ম্যান ছাড়া এই কাজের জন্য সিটি করপোরেশনের কোন জনবলই নেই। আর নিয়মিত ঔষধ ছিটানো সম্ভব না হওয়ায় মশার বংশ বৃদ্ধিও কমছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সিলেট নগরীর প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মশা। নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মশার উপদ্রব মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। গেল কয়েক মাস থেকে ঔষধ ছিটানো না হওয়ায় নগরীতে মশার উপদ্রব বেড়েছে বলে মনে করছেন ভূক্তভোগীরা। মশার উপদ্রব বাড়ায় দিনের বেলায় ঘুমাতে গেলেও নগরবাসীকে টানাতে হচ্ছে মশারি। মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে নগরীতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে।
মশক নিধনে সিটি করপোরেশনও নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে হলে সারাবছরই নগরীতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাতে হয়। বিশেষ করে মশার প্রজননের মৌসুমে ১০ দিন অন্তর অন্তর একযোগে পুরো নগরীতে মশার ঔষধ ছিটাতে হবে। এভাবে দুইমাস ঔষধ ছিটানো গেলে মশার বংশ বৃদ্ধি কমে আসবে। নগরবাসীও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবেন।
সিসিকের স্বাস্থ্য শাখা সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে (বর্ধিত নতুন ১২টি ওয়ার্ড ছাড়া) একযোগে ঔষধ ছিটাতে হলে অন্তত ১৫০ জন কর্মী প্রয়োজন। কিন্তু এই কাজের জন্য সিটি করপোরেশনের কোন জনবল নেই। মাত্র দুইজন স্প্রে ম্যান রয়েছেন। তাই কখনোই একযোগে পুরো নগরীতে ঔষধ ছিটানো সম্ভব হয় না। একেক ওয়ার্ড করে ঔষধ ছিটাতে গেলেও বাইরের দিনমজুরের উপরের ভরসা রাখতে হয়। অনভিজ্ঞ কর্মীরা ঠিকমতো ঔষধ ছিটাতেও পারে না। এছাড়া একেক ওয়ার্ড করে ঔষধ ছিটানোর পর মশা পার্শ্ববর্তী এলাকায় চলে যায়। যে কারণে মশক নিধন সম্ভব হয় না। ফলে মশার বংশবৃদ্ধি কমছে না। তাই ঔষধ ছিটিয়েও ফল মিলছে না।
সূত্র জানায়, সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়া ও খালের উপর এবং রাস্তার পাশে বক্স ড্রেন নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন। এই বক্স ড্রেনগুলোই মশার প্রজনন স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপর অংশ বন্ধ থাকার কারণে ড্রেনের ভেতর ঔষধও ছিটানো সম্ভব হয় না। ফলে এসব ড্রেনের ভেতর মশা ডিম পেড়ে বংশ বৃদ্ধি করছে।
নগরীর মেন্দিবাগের বাসিন্দা জুনেদ আহমদ চৌধুরী জানান, মশার যন্ত্রণায় তার এলাকার মানুষের জীবন অতিষ্ট হয়ে আছে। গেল কয়েক মাস থেকে সিটি করপোরেশনের কেউ ওই এলাকায় মশার ঔষধ ছিটায় নি। মাঝে মধ্যে ছিটালেও খুব বেশি দিন স্বস্তিতে থাকা যায় না। ঔষধ ছিটানোর পর এক সপ্তাহ মশার উপদ্রব কিছুটা কমলেও পরে আবার বেড়ে যায়।
নগরীতে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নগরভবনে সভা আহ্বান করা হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে একযোগে পুরো নগরীতে অভিযান করা যাচ্ছে না। ফলে ঔষধ ছিটিয়েও কাক্সিক্ষত ফল মিলছে না। বর্তমানে নগরীর ১, ২, ৩ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে মশক নিধন অভিযান চলছে উল্লেখ করে ডা. জাহিদ বলেন, এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে ঔষধ ছিটিয়ে মশার যন্ত্রনা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন একযোগে পুরো নগরীতে ঔষধ ছিটানো ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো। এছাড়া অন্তত ১০ দিন অন্তর অন্তর মশার প্রজননের স্থানগুলোতে ঔষধ ছিটাতে হবে। তাহলে মশার উপদ্রব কমানো সম্ভব হবে।
শেয়ার করুন