নিরাময় ক্লিনিকে টনসিল অপারেশন করাতে গিয়ে রোগীর মৃত্যু

সিলেট

টনসিল অপারেশনের জন্য সিলেটের একটি ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে ২ ঘণ্টা পর রোগীকে মৃত্যু পদযাত্রী অবস্থায় স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিলেন ডাক্তার। পরে ওসমানীতে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যান রোগী। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ করছেন স্বজনরা। 

রবিবার (২৫ জুন) বিকাল ৪টার দিকে মহানগরের নবাব রোড এলাকার নিরাময় পলি ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর থানার আলিমপুর গ্রামের মুতাহির আলীর ছেলে মো. হাফিজুর রহমানকে (১৭) তার গলার টনসিল সমস্যার জন্য মৌলভীবাজারে এবং সিলেটের কেয়ার হসপিটালে নাক-কান-গলার সার্জারি বিভাগের ডাক্তার রাফি আহমদ খানকে দেখানো হয়। ওই ডাক্তারের পরামর্শেই হাফিজুরকে অপারেশনের জন্য নিরাময় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। রবিবার বেলা ২টার দিকে নিরাময় ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে হাফিজুরকে ঢুকান ডা. রাফি।  কিন্তু দুই ঘণ্টা পর বিকাল ৪টার দিকে অপারেশেন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে ডা. রাফি রোগীর স্বজনদের জানান- হাফিজুর ভয়ে হার্ট অ্যাটাক করায় টনসিল অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। তার শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ। দ্রুত তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।

এ কথা বলে ডা. রাফি উদ্যোগী হয়েই হাফিজুরকে তড়িগড়ি করে ওসমানীতে নিয়ে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিই) ভর্তি করেন। কিন্তু সেখানে নেওয়ার আধা ঘণ্টা পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হাফিজুর।

এদিকে, হাফিজুরের মৃত্যুর পর ওসমানী হাসপাতাল থেকে ডা. রাফি উধাও হয়ে যান বলে অভিযোগ করছেন নিহতের স্বজনরা। তারা মুঠোফোনে রাফির সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এছাড়া তিনি হাফিজুরের চিকিৎসার সকল কাগজপত্রও সঙ্গে করে নিয়ে উধাও হয়েছেন বলে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ।

হাফিজুরের খালাতো ভাই তারেকুর রহমান সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘ডাক্তার রাফির ভুল চিকিৎসা বা ট্রিটমেন্টে আমার ভাই মারা গেছেন। আমরা আইনি পদক্ষেপ নিবো। ডাক্তারের যদি ভুল না হবে তবে তিনি ওসমানী থেকে পালিয়ে গেলেন কেন?’

এ বিষয়ে জানতে থেকে ডা. রাফি আহমদ খানের মুঠোফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে যোগাযোগ করা হয় নিরাময় পলি ক্লিনিকের সঙ্গে। ক্লিনিকটির ব্যবস্থাপক পারভেজ আহমদ সিলেটভিউ-কে বলেন- অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানোর পর ওই রোগী ভয় পেয়ে যায়। ফলে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের কোনো অবহলোয় রোগীর মৃত্যু হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- আমাদের এখানে আইসিইউ ব্যবস্থা নেই এটা ঠিক। তবে যেসব রোগীর আইসিইউ লাগবে বলে প্রথমেই ধারণা করা  হয় তাদের আমরা এই ক্লিনিকে ভর্তি করি না। ওসমানী হাসপাতাল বা যেসব হাসপাতালে  আইসিইউ আছে সেগুলোতে যাওয়ার পরামর্শ দেই। তবে এ রোগীর ক্ষেত্রে প্রথমে আইসিইউ লাগবে বলে ধারণা ছিলো না।

উল্লেখ্য, ‘কম খরচে উন্নত সেবার প্রতিশ্রুতি’ এই স্লোগানে একটি ভাড়া বাসায় ১৯৮৫ সালে যাত্রা শুরু নিরাময় পলি ক্লিনিকের। দীর্ঘ তিন যুগ ধরে চলে আসা ক্লিনিকটি ২০১৯ সাল থেকে অনুমোদন ব্যতিরেকে সেবা দিয়ে আসছিল। গত বছরের ৩০ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের যৌথ অভিযানে লাইসেন্স না থাকায় পলি ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ওইদিন অভিযানকালে নিরাময় পলি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এরপর সেটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *