পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে পুলিশকে দিতে হয় টাকা

সিলেট

দালালের সহায়তা ছাড়া পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হলে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। তবে আগের তুলনায় হয়রানি এখন অনেকটাই কমেছে। এ ছাড়া পাসপোর্ট পেতে যে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয়, অনেক ক্ষেত্রে সেখানেও টাকা ছাড়া সেবা মেলে না।

সিলেটের পাসপোর্ট সেবা উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে অংশীজনের সমন্বয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার বেলা তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ সভা হয়। এতে রাজনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। এতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পুলিশের সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক এম এ জলিল। শুরুতেই মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিভাগীয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপপরিচালক মহের উদ্দিন সেখ।

অংশীজনেরা বক্তব্যে জানিয়েছেন, এর আগে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও বিভাগীয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে সিলেটে পাসপোর্ট-সংক্রান্ত জটিলতা ও হয়রানি দূর করতে যে মতবিনিময় সভা হয়েছিল, সে সভায় অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়ার পর পাসপোর্ট কার্যালয়ের সেবা পেতে দালালদের উৎপাতসহ হয়রানি এখন অনেকটাই কমেছে।

বক্তব্যে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার জানান, ২৭ সেপ্টেম্বরের সভায় অংশীজনের কাছ থেকে পাওয়া ১৪টি সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ সমাধান হয়েছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে সমাধান হবে। এরই মধ্যে পাসপোর্ট কার্যালয়ের দালালের চক্রমুক্ত করা হয়েছে। সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন মার্জিত আচরণ করেন, সেটা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি মঙ্গলবার পাসপোর্ট কার্যালয় গণশুনানি করে, এতে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানাতে পারেন।

পাসপোর্ট পেতে পুলিশ ভেরিফিকেশনে অনেক সময় টাকা লাগে, একাধিক অংশীজনের এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে সভায় সিলেটের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক এম এ জলিল বলেন, বিষয়টা পুলিশ খতিয়ে দেখবে। কেউ যদি পুলিশের কাছ থেকে সদাচরণ না পান, কিংবা কোনো পুলিশের সদস্য যদি এ জন্য টাকা চান, তাহলে ভুক্তভোগীদের বিষয়টি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জানানোর পরামর্শ দেন তিনি।

সভায় কয়েকজন অংশীজন অভিযোগ করেন, আগের চেয়ে ভোগান্তি অনেকটা কমলেও এখনো দালালদের মাধ্যমে করা পাসপোর্টের আবেদনে থাকা ‘বিশেষ চিহ্ন’ধারী ব্যক্তিরা বেশি সুবিধা পান। এ সময় পাসপোর্ট কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য সরু রাস্তাটি প্রশস্তকরণের জন্যও অনুরোধ জানানো হয়।

সভায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসিনা বেগম চৌধুরী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, সিলেট এমসি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মো. নজরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সুদীপ দাস, কলাম লেখক আফতাব চৌধুরী বক্তব্য দেন। এতে আরও বক্তব্য দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি প্রকৌশলী হাসিবুর রহমান, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ, ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা জয়নাল আবেদীন ও মো. আবুল কালাম আজাদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, পাসপোর্ট কার্যালয়ে এখন দালাল নেই। দালালেরা কার্যালয় থেকে অনেক দূরে গেছে। তাদের চিরতরে সরাতে হবে। পাসপোর্ট পাওয়া মানুষের বৈধ অধিকার। এতে যেন কেউ হয়রানির শিকার না হন, এটা নিশ্চিত করা হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনে যেন কাউকে টাকা না দিতে হয়, সেটাও পুলিশ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে নিশ্চিত করা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *