বাঘাইড় বিক্রি দন্ডনীয় অপরাধ ! জানেন না ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ

সিলেট

স্টাফ রিপোর্টার : বাঘাইড় মাছ ধরা ও বিক্রি দন্ডনীয় অপরাধ। এই আইন সম্পর্কে জানেন না সিলেটের ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ। ফলে নগরীতে প্রকাশ্যেই চলছে মহাবিপন্ন প্রজাতির বাঘাইড় মাছ বিক্রি। শহরে রীতিমত প্রচার চালিয়ে এই মাছ বিক্রি করা হয়। তবে আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও বাঘাইড় ধরা ও বিক্রি বন্ধে তেমন কোন কোন উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের। পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, এভাবে অবাদে বিক্রি অব্যাহত থাকলে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে বাঘাইড়।

জানা গেছে, গত বুধবার (১৫ মার্চ) নগরীর লালবাজারে বিশাল আকৃতির একটি বাঘাইড় মাছ কেটে কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। প্রায় ১৬০ কেজি ওজনের এই মাছ আস্ত বিক্রি না হওয়ায় বুধবার কেটে কেজি দরে বিক্রি করেন বিক্রেতা। প্রতি কেজি বিক্রি হয় দুই হাজার টাকা দরে। এর আগে মঙ্গলবারও মাছটি বিক্রির জন্য লালবাজারে তোলা হয়। তবে আস্ত মাছ বিক্রি না হওয়ায় বুধবার কেজি দরে বিক্রি শুরু করেন বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন। এই মাছ বিক্রির জন্য বুধবার বাজারে তোলা হবে এমন তথ্য জানিয়ে মঙ্গলবার নগরে মাইকিংও করা হয়।

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে প্রায়ই বড় আকৃতির বাঘাইড় মাছ ধরা পড়ে। সেগুলো সিলেটের ঐতিহ্যবাহী লালবাজারে এনে বিক্রি করা হয়। এর আগে ২০২১ ও ২০২২ সালে কুশিয়ারা নদীর জকিগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় অন্তত চারটি বাঘাইড় মাছ ধরা পড়ে। যা পরে লালবাজারে বিক্রি হয়।

অথচ মহাবিপন্ন প্রজাতির এই মাছ ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন আইনত নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে আইনের তোয়াক্কা না করেই চলছে বেছাকেনা। এর পেছনে আইন সম্পর্কে না জানাকেই দায়ী করছেন অনেকে।

প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ‘আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ’ (আইইউসিএন) এর লাল তালিকায় রয়েছে ‘মহাবিপন্ন’ বাঘাইড়।

এছাড়াও বাঘাইড় মাছ বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ২নং তফসিলভুক্ত একটি সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী। এই আইনানুযায়ী বাঘাইড় মাছ শিকার, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন কিংবা দখলে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হতে পারে।

তবে এ আইনের ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন লালবাজারে বাঘাইড় মাছ বিক্রি করা আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, এই মাছ প্রায়ই লালবাজারে বিক্রি হয়। কেউ কখনো বিক্রিতে আমাদের বাধা দেয়নি। বাঘাইড় মাছ বিক্রি যে অপরাধ এই কথাও কেউ জানায়নি।

প্রকাশ্যে বিপন্ন প্রজাতির একটি মাছ বিক্রিকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, মহাবিপন্ন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ এ মাছ ঢালাওভাবে শিকার ও বিক্রির বিষয়টি দুঃখজনক। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই মাছটি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনানুযায়ী এ মাছটি বিক্রি নিষিদ্ধ, তাই বন অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তর এ মাছ শিকার ও ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে সবার আগে প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণা।
তবে মৎস্য অধিদপ্তর আইনে বাঘাইড় মাছ বিক্রি নিষিদ্ধ কিংবা দন্ডনীয় অপরাধ বলে কোন ধারা নেই বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: আহসান হাবিব খান। ফলে তারা কোন ব্যবস্থা নিতেও পারছেন বলে জানান তিনি।

বাঘাইড় শিকার ও বিক্রি বন্ধে সচেতনামূলক প্রচারণার প্রয়োজনীয়তার কথা জানালেন বন কর্মকর্তাও। বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও প্রকৃতি অঞ্চল মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, এই মাছ যে মহাবিপন্ন প্রজাতির এবং এটি বিক্রয় নিষিদ্ধ তা বেশিরভাগ লোকই জানে না। তাই বাঘাইড় বিক্রি বন্ধে সবার আগে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। মানুষকে সচেতন না করতে পারলে বিক্রি বন্ধ করা যাবে না।

ইতোমধ্যে সচেতনামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সম্প্রতি মৌলভীবাজারে বাঘাইড়সহ মহাবিপন্ন প্রজাতির মাছগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ এবং মাইকিং করেছি। বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রচারণা চালিয়েছি। গত পৌষে মাছের মেলায়ও প্রচারণা চালানো হয়েছে। মৌলভীবাজার থেকে দুয়েকবার বাঘাইড় জব্দও করেছি। শীঘ্রই সিলেটেও এ ব্যাপারে সচেতনামূলক কার্যক্রম চালানো হবে। এরপরও বাঘাইড় বা এরকম বিক্রয় নিষিদ্ধ কোন মাছ বিক্রি করা হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *