সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ভোটের প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দলটির অনেক নেতাই প্রার্থী হচ্ছেন না।আবার দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোটে লড়ছেন বিএনপি অনেক নেতাও।তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর।এঁদের কয়েকজন ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছেন।অন্যরা আজ মঙ্গলবার তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করার কথা।
তবে, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে যাঁরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, বা নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন তাদের মধ্যে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও টানা চারবারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ছাড়া ভোটের মাঠে অন্যদের অবস্থান খুব একটা সুবিধাজনক নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন।তাদের বেশিরভাগই বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী বলয়ের নেতাকর্মী।আর দলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যাঁরা ভোটে থাকছেন বা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের অধিকাংশও বিএনপিতে আরিফপন্থী বলে পরিচিত।বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তদিকের সমর্থকও আছেন কয়েকজন।ফলে বিএনপির বর্জনের ভোটেও প্রার্থী থাকছেন বিএনপির নেতারাই।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবার আগে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন ৪ নং ওয়ার্ডের টানা চারবারের কাউন্সিলর ও সাবেক প্যানেল মেয়র, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।জনপ্রিয় এ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের এবারও ভোটে লড়ার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু ১৮ মে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। সেই সঙ্গে তিনি আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করারও ঘোষণা দেন।বলেন, ‘বিএনপি’র দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই সরকার ও সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমি কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো না।’
এর দু’দিনের মাথায় ২০ মে নানা নাটকীয়তার পর মেয়রপদে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন টানা দুইবারের সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।এ উপলক্ষে নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে কারচুপির নীলনকশার অংশ হিসেবে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়েছে। একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আমার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এরকম অবস্থায় আমি নির্বাচনে যেতে পারি না। আমি বিএনপির সিদ্ধান্তের সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমি প্রহসনের নির্বাচনে প্রার্থী হবো না।’
সমাবেশে নগরবাসীকে নির্বাচন বর্জনের আহবান জানান আরিফ। বলেন, ‘এই নির্বাচন আসলে নির্বাচন নয়, এটি প্রহসন। তাই আমার দলীয় নেতাকর্মীসহ সকল নাগরিককে এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাই। দয়া করে আপনারা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।’
লোদী-আরিফের পথ ধরেই সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন ১৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর দিনার খান হাসু।নাশকতার মামলায় গ্রেফতারের পর জামিনে মুক্তি পেয়েই নির্বাচনে না দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ও মহানগর বিএনপির সাবেক এই যুগ্ম সম্পাদক।সংবাদ সমম্মেলনে দিনার খান হাসু বলেন, ‘আগামী সিসিক নির্বাচনে ১৯ নং ওয়ার্ড আবারও কাউন্সিলর প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।’ তিনি সবাইকে প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করারও আহবান জানান।
এর আগের রাতে (রোববার) প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ২২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও এ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন।
এছাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. আমির হোসেন, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা বিএনপির শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিব হোসেন হাবিব, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে দক্ষিণ সুরমাকুচাই ইউনিয়ন সভাপতি বজলুর রহমান ফয়েজ কাউন্সিরর পদে নির্বাচন করছেন না বলে জানা গেছে।
তবে, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সোমবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বিএনপির তিন নেতা। তাঁরা হলেন ১ নং ওয়ার্ডে তৌফিকুল হাদী, ১৪ নং ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম মুনিম ও ১৮ নং ওয়ার্ডে এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল।তাঁরা সবাই ওয়ার্ডের বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
আজ মঙ্গলবার শেষদিনে ৬ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম এবং মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর রোকসানা বেগমসহ বিএনপির আরও কয়েকজন নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে শামীম বিএনপির মুক্তাদির বলয় ও হাদী আরিফ বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত।
এ ব্যাপারে কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এলাকার মানুষ তো আমাকে ছাড়ছে না। আমি এখানকার দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর। আর কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না।’
মনোনয়নপত্র জমা দেয়া ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিকুল হাদী বলেন, ‘দল নির্বাচনে যাবে না। তবে এলাকাবাসীর চাপে আমি প্রার্থী হয়েছি।’
শেয়ার করুন