বিশ্বনাথে দশপাইকা আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসার নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা, ডিসি বরাবরে স্মারকলিপি

সিলেট

ফারুক আহমদ
স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের দশপাইকা আনোয়ারুল উলুম আলীম মাদ্রাসার গভর্নিং বডির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উত্তেজনা যাতে সংঘর্ষে রুপ না নেয় সেজন্য সোমবার এব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী শান্তিপ্রিয় লোকজন।

স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেছেন, আগামী ২৭ এপ্রিল মাদ্রাসার এডহক কমিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে প্রতিষ্ঠানের অনেক অভিভাবক সদস্যদের পাশাপাশি এলাকার মুরব্বীয়ানরাও এব্যাপারে কিছু জানেন না। এলাকার কিছু কুচক্রি-অসাধু ব্যক্তিরা স্মারকলিপি প্রদানকারীদের অজান্তে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের সমন্বয়ে তাদের নিজস্ব বলয়ের মানুষদের নিয়ে নির্বাচন করার পায়তারার লিপ্ত রয়েছেন। ফলে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকার চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় অনাকাঙ্খিত সংঘর্ষের ঘটনা সংগঠিত হওয়ার আশংঙ্কা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সাথে যোগাযোগ না করে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বিভিন্ন অনিয়ম কার্যক্রম পরিচালনা করার পাশাপাশি নিজের (অধ্যক্ষ) মনোনীত সদস্যদের নিয়ে কমিটি নির্বাচন করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মাদ্রাসাটি।

স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ আরো উল্লেখ করেছেন, দশপাইকা আনোয়ারুল উলুম আলীম মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য সদ্য মেয়াদ উত্তীর্ন কমিটিতে পিতা মনোহর আলীকে সভাপতি ও পুত্র শেখ মোঃ শওকত আলী ইমনকে শিক্ষানুরাগী সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর পিতা-পুত্র ও অধ্যক্ষের সমন্বয়ে একটি পারিবারিক কমিটি মাদ্রাসা পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সভাপতি পিতাকে অসুস্থ দেখিয়ে শিক্ষানুরাগী সদস্য পুত্র ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে এবং অধ্যক্ষ ও তাহার আস্থাভাজন সদস্যদের নিয়ে মাদ্রাসার শূন্য পদে (মহিলা আয়া, নৈশ প্রহরী, কম্পিউটার অপারেটর কাম অফিস সহকারী) মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তথাকথিত নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কিন্তু ওই কমিটি নিজেদের মেয়াদের মধ্যে নিয়োগ উক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও তাহার সহযোগী এলাকার কিছু সংখ্যক মানুষের সহযোগীতায় এডহক কমিটি গঠনে পিতা মনোহর আলী মারা যাওয়ায় পুত্র শেখ মোঃ শওকত আলী ইমনকে আহবায়ক কমিটির সভাপতি করে অবৈধ অর্থের বিনিময়ে যোগাযোগী ও বেআইনী নিয়োগ কার্যক্রমকে বৈধতা দেওয়ার জন্য গোপনে এডহক কমিটি গঠন সম্পন্ন করেছে। কমিটি গঠনের পর তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবক সদস্যদের স্বাক্ষর গ্রহন করে সাধারণ সভা ‘সত্য ও বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
এজন্য মাদ্রাসা পরিচালনা সংক্রান্তে ঘটিত ওই বিতর্কিত কমিটির ব্যাপারে সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ড-এর চেয়ারম্যান’ বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের কাছেও পৃথক আরেকটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে।
এর অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে।

স্মারকলিপি প্রদানকারীদের দাবী, মাদ্রাসা পরিচালনা সংক্রান্ত আয়-ব্যয়, শিক্ষক হাজিরা, পরীক্ষা সংক্রান্ত ব্যয় ইত্যাদি সরেজমিনে অনুসন্ধান বা তদন্ত করলে নিকট আত্নীয় অধ্যক্ষ ও পিতা-পুত্র সভাপতির দূর্নীতির চিত্র পাওয়া যাবে। এমতাবস্থায় মাদ্রাসার নিয়ম শৃংখলা ও এলাকার বিরাজীয় উত্তেজনা বা অনাকাঙ্খিত সংঘর্ষ বন্ধের উদ্যোগ গ্রহনের জোরদাবী জানান নেতৃবৃন্দ।

অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া বলেন, ঈদের পর মাদ্রাসায় দু’পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টির সুষ্ঠ সমাধান করা হবে।
এদিকে এব্যাপারে অনুলিপি পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *