স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটের বিশ্বনাথের বীর মুক্তিযোদ্বা মো. আনোয়ার হোসেন (৭৪) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজেউন। গতকাল শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।বাদ আছর উপজেলার নতুন হাবড়া বাজার ইদগাহ মাঠে জাতীর এই শ্রেষ্ট সন্তান মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের জানাযার নামাজ সম্পন্ন হয়। এরপর বিশ্বনাথ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অফ অনার শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের এই বীর সেনানী
১৯৫০ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর বিশ্বনাথ উপজেলার স্থানীয় পৌরসভার চরচন্ডি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরীবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতার নাম ছিল মো. ময়না মিয়া ও মাতার নাম ছিল সোনাবান খানম। ১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধের দামামা বাজে উঠে তখন নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা জানা মো. আনোয়ার হোসেন তখন বয়সে অনেকটা তরুণ। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নির্বিচারে যখন এদেশে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, নারীধর্ষণ, নির্যাতনসহ বর্বরোচিত ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে। তখন অন্য সব তরুণের মত মো. আনোয়ার হোসেন নিজের মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে জীবনের মায়া ত্যাগ করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নৈন। তিনি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ইকোওয়ানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে ফিরে এসে ৫নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে নামেন। চেলায় ছিল তাদের সাব-সেক্টর। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তৎকালীন মেজর মীর শওকত আলী ও সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন হেলাল উদ্দিন আহমদ। যুদ্ধের শেষ দিকে ইয়াংকি কোম্পানি গঠিত হয়। মো. আনোয়ার হোসেন ছাতকের উত্তরাঞ্চল, বালাটের পূর্বাঞ্চল, সত্তারপুরের পশ্চিমাঞ্চলসহ যখন সেখানে প্রয়োজন ছিল সেখানেই বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন। বালাট সাব-সেক্টরের পূর্ব ও মুক্তাপুর সাব-সেক্টরের পশ্চিম এবং ছাতকের উত্তরাঞ্চল ছিল চেলা সাব-সেক্টরের আওতাধীন যুদ্ধক্ষেত্র। আনোয়ার হোসেন এসব অঞ্চলে যুদ্ধ করেন। তার মুক্তিবার্তা নং ০৫০১০৯০০২৩ এবং গেজেট নং ছিল ১৩৭৭।
মো. আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে নানান রোগব্যাধীতে আক্রান্ত ছিলেন। গত সপ্তাহে একটু বেশী অসুস্থতা বোধ করলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল শুক্রবার তিনি সকাল সাড়ে ছয়টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ঐদিন বাদ আছর মরহুমের নিজ বাড়ির পার্শ্ববর্তী নতুন হাবড়া বাজার ইদগাহ মাঠে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাজে ঈমামতি করেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা সাইদুর রহমান। এতে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী, দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজ আরব খান, বিশ্বনাথ উপজেলা জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক আমীর মুহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তৈয়ব আলী ,ওয়াহিদ আলী সহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জানাযা শেষে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনন্দা রায়ের উপস্থিতিতে প্রশাসন ও পুলিশের একটি দল মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনের এই সাহসী বীর সেনানী কে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়। এরপর মরহুমের নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
শেয়ার করুন