বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষে বিএনপির এমপিরা জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন দলটির বিদেশ বিষয়ক কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
রোববার পদত্যাগপত্র জমা দিতে জাতীয় সংসদে প্রবেশের আগে তিনি একথা বলেন। এরপর বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা।
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমাদের ঢাকার দলের গণসমাবেশ থেকে ১০ টি গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। তার প্রথম যে নির্দেশনা ছিল সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং সংসদ থেকে পদত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা।’
‘এই সংসদ ভেঙে দেওয়ার যে দাবি আমাদের দলের। সেই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরা সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করছি।’
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আজকে আমরা স্পিকার মহোদয়ের হাতে আমাদের পদত্যাগ পত্র তুলে দিব। আমরা শনিবার ইমেইলের মাধ্যমে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে মাননীয় স্পিকারকে ফোন করে জানিয়েছি আমরা সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন।’
বিএনপির এমপিদের পদত্যাগের বিষয়ে স্পিকার মিডিয়ার মাধ্যমে ইতোমধ্যেই অবগত হয়েছেন উল্লেখ করে পদত্যাগী এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এই সংসদ থেকে আমরা আজকে পদত্যাগ করছি। আপনারা দেখেছেন এই সংসদে আমরা যতটুকু পেরেছি আমরা জনগণের কথা, দেশের কথা, মানুষের কথা, আপনাদের কথা বলবার চেষ্টা করেছি।’
‘সংসদে আমাদেরকে কথা বলতে বাধা দেয়া হয়েছে। আমাদেরকে সময় দেওয়া হয়নি। আমাদের সুযোগ খুব সীমিত ছিল, তারপরেও আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করেছি।’
বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষে বিএনপির এমপিরা জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লুটপাটের ওপর নির্ভর করা সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর নূন্যতম নৈতিক অধিকার নেই।’
বিএনপির সাত এমপির পদত্যাগে সরকার দলীয় নেতারা বলছেন তাদের কোনো সংকট তৈরি হবে না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রুমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংকট তৈরি হবে কি হবে না সেটা আপনারা নিজেরাই দেখবেন। সংসদে সত্যিকারের বিরোধী দল বলতে যদি কিছু থাকে সেটি হলো বিএনপি। একথা দেশের মানুষও জানে সরকারও ভালো ভাবে জানে। আর সংকট যে তৈরি হবে সেটা বুঝা যায় যখন প্রথমেই বলে সংকট তৈরি হবে না।’
সংসদে আসার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একদম ভুল ছিল না। আমরা বলেছিলাম যে সীমিত সুযোগ আমরা পাব সেই সীমিত সুযোগের সদ্ব্যবহার আমরা করব। আর সাড়ে তিন বছরে আপনারা দেখেছেন আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়েছি। সুযোগ দেয়নি, সময় দেয়নি, মাইক অফ করে দিয়েছে। এর মধ্যে থেকেও যতটা সম্ভব করেছি।
পদত্যাগ পত্র জমা দেয়ার সময় সশরীরে উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেন, বগুড়া–৬ আসনের গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।
আর অস্ট্রেলিয়া থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ এবং অসুস্থতার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না। তাদের পক্ষে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
এর আগে শনিবার ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের (বিএনপি) দলের সাতজন সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করবো।’
এরপর বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাও তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের দলীয় এমপিরা সবাই সংসদ থেকে পদত্যাগ করছেন। সবাই ইমেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। আগামীকাল (রোববার) হাতে হাতে দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট থেকে আটজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে বিএনপির ছয়জন এবং গণফোরামের দুজন। বিএনপির ছয়জনের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ছিলেন।
নির্ধারিত সময়ে শপথ না নেওয়ায় মির্জা ফখরুলের আসনে উপনির্বাচন হয় এবং সেখানে বিএনপির আরেক প্রার্থী জয়ী হন। এরপর সংরক্ষিত আসন থেকে রুমিন ফারহানা এমপি হলে বিএনপির সংসদ সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় সাতজনে।
শেয়ার করুন