ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে পদযাত্রা

জাতীয়

স্বীকৃতি বিশ্বাস স্টাফ রিপোর্টারঃ

ভবদহ এলাকাকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে আজ (৩০ জুলাই) শনিবার সকাল এগারো ঘটিকায় ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার শিল্প শহর নওয়াপাড়ায় পদযাত্রা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

নওয়াপাড়া পাবলিক ইনস্টিটিউট থেকে সকাল ১১ টায় শুরু হওয়া পদযাত্রটির উদ্বোধন করেন নওয়াপাড়া ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক, অভয়নগর উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা , অভয়নগর প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা ফারুক হোসেন। উদ্বোধনীতে বক্তব্য রাখেন- ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ।তিনি বলেন, ‘ভবদহের জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৫ বার স্মারক লিপি প্রদান করেছি। আমলা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা টিআরএম প্রকল্প চালু করার ক্ষেত্রে বিরোধীতা করছেন। আন্তর্জাতিক ভাবে ডেল্টা প্লান- ২১০০ বাস্তাবায়নের জন্য ভবদহ অঞ্চলে টিআরএম(টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সুপারিশ রয়েছে। কিন্তু আমলা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বৃহত্তর ভবদহ এলাকাকে জলাভূমি আখ্যায়িত করে টিআরএম প্রকল্পের মাধ্যমে বিল উঁচু করণ প্রকল্প বাতিল করার কথা বলেছেন। তারা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে যশোর সদরসহ মনিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর,ডুমুরিয়া উপজেলার ব্যাপক এলাকার ২৭ টি বিলের জলাবদ্ধতা দূর করার লক্ষ্যে আবারও ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার কল্পনা প্রসূতঃ স্যালো ম্যাশিন প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। গত তিন বছর যাবত সেচ প্রকল্প চলছে কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসন করে ব্যাপকহারে ফসল উৎপাদনের কথা বললেও কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার হেক্টর জমিতে এক বিন্দু ফস হয়নি। মাঝে পড়ে সেচ প্রকল্পে লাখ লাখ ইউনিট বিদ্যুতের অপচয় হয়েছে ও হচ্ছে যা বর্তমান সময়ের বিদ্যুতের লোডসেডিং-এর প্রেক্ষাপটে দেশের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে।ফলে উল্লেখিত সেচ প্রকল্প বন্ধ করে দেশের লাখ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করে দেশের জনগণকে লোডশেডিংএর হাত থেকে রক্ষা করা।
এ সময় আন্দেলনের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন- ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতা এইচ এম মহসিন।
পদযাত্রাটি উদ্বোধনের পর ভবদহ অঞ্চল থেকে আগত প্রায় দেড় হাজার নারী-পুরুষ পদযাত্রায় অংশ গ্রহন করেন। তারা যশোর- খুলনা মহাসড়ক ধরে দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে দুপুর দেড়টায় আমডাঙ্গা খাল পড়ে পৌঁছান।

পদযাত্রার উদ্দেশ্য- এক বছর আগে বরাদ্দ হওয়া আমডাঙ্গা খাল পুন: খনন প্রকল্প দ্রুত চালু করে মানুষ বাঁচানো,মানবিক বিপর্যয় রোধে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিল কপালিয়ায় টিআরএম প্রকল্প চালু করা, লুটপাতের জন্য ৪৫ কোটি টাকার সেচ প্রকল্প বাতিল করা,এলাকার সকল নদী খাল দখল মুক্ত করে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পুনঃ খনন করা, ভবদহ অঞ্চলের জমির খাজনা মৌকুফ করা, ভবদহ অঞ্চলের বেকারদের বেকারত্ব ভাতা প্রদানসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা,আমডাঙ্গা খালের দুই পাশের ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা,পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি নিশ্চত করা ইত্যদি।

পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারী সুন্দলী গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ সন্ন্যাসী কবিরাজ(৮৫) বলেন, ভবদহের বিলে তার ৫ বিঘা ধানী জমি রয়েছে। তার পরিবার কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ৫/৬ বছর যাবত বিলে কোন ফসল হওয়ায় তার পরিবারে যেমন খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে তেমনি পশু খাদ্যেরও অভাব দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বর্ষার মৌসুম এলেই তার বাড়ির উঠানসহ আশেপাশের কোমর পর্যন্ত জল জমে। ৬ থেকে ৭ মাস পর্যন্ত ওই জলের মধ্যে তাদের বসবাস করতে হয়।

বেদভিটা গ্রামের কৃষক বীরেন্দ্র নাথ মল্লিক জানান, গত বছর শ্রাবণ মাসে তার বাড়ির উঠানে কোমর পর্যন্ত জল উঠেছিলো আর ওই জল ৮ মাস পর বাড়ি থেকে নামে। জলের সাথে সংগ্রাম করে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। তার মতে আমডাঙ্গা খালটি সংস্কার হলে এলাকা এ ভয়াবহ জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে।
পদযাত্রাটি দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আমডাঙ্গা খালের পাড়ে পৌঁছে মানববন্ধনে মিলিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন-ভবদহ পানি নিষ্কাশন
আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী, সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল, মনিরামপুর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধাগাজী আব্দুল হামিদ, ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতা অধ্যাপক অনিল বিশ্বাস,শিবপদ বিশ্বাস, আব্দুল আজিজ, সাধন মন্ডল, শেখর বিশ্বাস, লুৎফর রহমান, মঞ্জুরুল আলম, নারী নেত্রী পারভীন আক্তার প্রমুখ। এ সময় খাল পাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের অবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, দীনবন্ধু সরকার ও মধুসুদন পাল।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *