বিদায়ী মার্চ মাসে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৫৪৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫৯২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৬৭ জন। এ সময় ৪৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩৮ জন নিহত এবং ১১৩৮ জন আহত হন। একই সময় রেলপথে ৫৩টি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ৯টি দুর্ঘটনায় সাত জন নিহত, ১৪ জন আহত এবং দুই জন নিখোঁজ রয়েছেন। এ মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। ১৫২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৩ জন নিহত এবং ৯৭ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (৫ এপ্রিল) সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী সই করা এক বিবৃতিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৭৯ জন চালক, ১০১ জন পথচারী, ৬০ জন পরিবহন শ্রমিক, ১২২ জন শিক্ষার্থী, ১৩ জন শিক্ষক, ১২ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৯০ জন নারী, ৫০ জন শিশু, দুই জন সাংবাদিক, সাত জন মুক্তিযোদ্ধা, দুই জন আইনজীবী, একজন প্রকৌশলী এবং পাঁচ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
তাদের মধ্যে নিহত হয়েছে তিন জন পুলিশ সদস্য, তিন জন সেনাবাহিনীর সদস্য, দুই জন আনসার সদস্য, একজন বিমানবাহিনীর সদস্য, ১৪০ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৯৩ জন পথচারী, ৬৭ জন নারী, ৩৭ জন শিশু, ৪২ জন শিক্ষার্থী, ২৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ৯ জন শিক্ষক, ছয় জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিন জন চিকিৎসক, একজন সাংবাদিক, দুই জন আইনজীবী এবং পাঁচ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এ সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় ৬৬৬টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ বাস, ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৩ দশমিক ১২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ গাড়ি চাপায়, ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬ দশমিক ৪২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং ১ দশমিক ২৩ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষে ঘটেছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে সংঘঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৩ দশমিক ০৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৩ দশমিক ২০ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৫ দশমিক ১১ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ২৩ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবং ১ দশমিক ২৩ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে ঘটেছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে মার্চে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণ
১. চালকের অদক্ষতা এবং বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে গাড়ি চালানো।
২. বেপরোয়া গতি এবং বিপজ্জনক অভারটেকিং।
৩. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো।
৪. ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল।
৫. চালকের কর্মঘণ্টা ও বেতন সুনির্দিষ্টি না থাকা।
৬. রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা। রাস্তার পাশে হাটবাজার।
৭. যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা।
৮. ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা।
৯. ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধির ফলে সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে।