মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় হতদরিদ্র দুই শতাধিকের বেশি গ্রাহকের প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা একটি বেসরকারি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ নিয়ম মাফিক অর্থ জমা দিয়েও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর পাওয়া যাচ্ছে না তিল তিল করে সঞ্চয় করা কাঙ্ক্ষিত টাকা।
এছাড়া বছরের পর বছর ধরে ‘বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ নামের প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হয়ে জমানো অর্থ ফেরত চাইলেও মিলছে না কোন সুফল।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার ২নং বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থান নিয়ে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানি ও প্রায় কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগীরা।
পরে ভারপ্রাপ্ত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের কাছে সহযোগিতা চেয়ে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগদেন তারা। ভুক্তভোগীরা জানান, বীমা কোম্পানিটি বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে প্রায় ১৬ বছর আগে কার্যক্রম শুরু করে। অধিক মুনাফা পাওয়ার আশায় ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা ওই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মেয়াদে বীমার হিসাব খোলেন।
এরপর প্রতি মাসে ডিপিএসের টাকা জমা দেয়া হয় পরে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে গ্রাহকরা সুদসহ তাদের আমানতের টাকা ফেরত চাইতে গেলে ‘বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্সের গজারিয়া শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে তালবাহানা করতে শুরু করে।
গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে আরও জানা যায়, স্থানীয় হালিম মৃধা ও আবুল হোসেনের মাধ্যমে তারা বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে নিয়ম তান্ত্রিকভাবে টাকা জমাদান করেন কিন্তু বীমার মেয়াদ শেষ হলেও এখন টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহক।
স্থানীয় এক ভুক্তভোগী বড় রায়পাড়া গ্রামের আয়েশা বেগমসহ কয়েকজন গ্রাহক জানান, দ্বিগুণ লাভের লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়। কিন্তু কয়েক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয় অফিস বন্ধ, এরিয়া ম্যানেজারের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। ফোন দিলে ফোন ধরে না। আমাদের প্রাপ্য টাকা ফেরত চাই।
একই অভিযোগ বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য সোলেমান হোসেন ঢালীর। তিনি বলেন, আমিও প্রতারণার শিকার। বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের শত শত মানুষ বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সদস্য হয়েছে। প্রায় ১২ বছর ধরে অনেক মানুষ টাকা জমা দিয়ে আসছে। তবে মেয়াদপূর্তি হলেও কাউকে মূল অর্থ কিংবা বা লাভের টাকা ফেরত দেয়নি কোম্পানিটি। আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের প্রাপ্য টাকা ফেরত চাই।
ভুক্তভোগীর আরও জানান, বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে তাদের ফাঁদে ফেলেন। এলাকার সাধারণ মানুষদের একে একে সদস্য বানিয়ে মাসিক কিস্তি সংগ্রহ করতে থাকেন।
গ্রাহকরা বিশ্বাস করে ২০০ অথবা ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অংকের টাকা প্রতিমাসে জমা দিতেন কোম্পানির কর্মীদের কাছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অল্প অল্প করে অর্থ সঞ্চয় করতে থাকেন এবং আশায় বুক বাঁধেন। মেয়াদপূর্তিতে বিশাল অংকের টাকা গ্রাহকরা পাবার কথা থাকলেও ঘটেছে তার উল্টো, প্রাপ্য টাকা পাননি কেউই।
এছাড়াও কোম্পানিটির গ্রাহকরা বলছেন কয়েক দফায় আমানতের টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ডিপিএসের মূল বই ও টাকা জমা দেয়ার রশিদ পর্যন্ত জমা নেন। তার দেয়া কথামতো ওই সমস্ত গ্রাহকরা টাকা চাইতে গেলে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অনেকে। এতে কোম্পানির কয়েক শতাধিক গ্রাহক বীমার টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে বড় রায়পাড়া গ্রামে গজারিয়া শাখা চালু করে কার্যক্রম শুরু করে বেসরকারি জীবন বীমা খাতের কোম্পানি বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্স।
শাখাটির প্রধান দায়িত্বে থাকা হালিম মৃধা ওই শাখায় বিভিন্ন পদে কর্মকর্তা ও মাঠ কর্মী নিয়োগ করে কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর দ্বিগুণ লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শত শত পলিসি করে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন কোম্পানির নামে।
এরপর ২০২৩ সালের শেষ দিকে ওই শাখা অফিসে তালা ঝুলিয়ে গ্রাহকদের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে পড়েছেন কোম্পানির গজারিয়া শাখার এরিয়া ম্যানেজার হালিম মৃধাসহ অন্য কর্মকর্তারা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে অভিযুক্ত বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির তৎকালীন এরিয়া ম্যানেজার হালিম মৃধা বলেন, সাধারণ মানুষ না বুঝে, অযথা অধৈর্য হয়ে আমাকে অভিযুক্ত করছেন। আমি গ্রাহকের টাকা কোম্পানির নিয়ম মাফিক অফিসে জমা দান করি। কিন্তু মেয়াদ পূর্ণ হলেও এখন কোম্পানি টাকা দিচ্ছে না, আমি নিজেও এই মুহূর্তে অসহায় বোধ করছি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সম্পর্কে জানতে বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির প্রকল্প ম্যানেজার মিজানুর রহমানের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া গেছে।
শেয়ার করুন