ফাতেমা খানম দুই দিন ধরে চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস রোগে ভুগছেন। মারাত্মক ছোঁয়াচে এই রোগে কাবু হয়েছেন তার স্বামীও। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের ড্রপ কিনতে গিয়ে বাসার আশেপাশে কোনও ফার্মেসিতে পাননি। এরপর তিনি চোখের ড্রপ খুঁজতে মগবাজার থেকে মিটফোর্ড এলাকার ওষুধের মার্কেটে যান। সেখানেও পাননি। বিক্রেতারা তাকে জানিয়েছেন, রোগীর চাহিদা অনুযায়ী, সাপ্লাই দিতে পারছে না কোম্পানিগুলো।
দেশে সম্প্রতি চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ বেড়েছে। চিকিৎসকদের মতে, এটি অত্যন্ত সংক্রমিত রোগ। চোখের কনজাংটিভা নামক পর্দার প্রদাহই চোখ ওঠা রোগ। এ রোগটি মূলত ভাইরাসজনিত এবং ছোঁয়াচে। এই রোগের জন্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দায়ী। সাধারণত যে মৌসুমের বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকে, সে সময় এ রোগটা বেশি হয়। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্যমতে, দৈনিক ১০-১৫ শতাংশ রোগী আসছেন এই রোগ নিয়ে।
চোখ ওঠা রোগ নিরাময়ে সময় লাগে ৭-১০ দিন। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এসময় চিকিৎসকরা চোখের যত্ন নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি ওষুধ হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ দেন। রোগী আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যাওয়ায় চাপ পড়েছে এই ওষুধ সরবরাহের ওপরে।
রাজধানীর কয়েকটি ফার্মেসির বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওষুধ না থাকায় অনেক রোগীকেই ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানির ওষুধ বাজারে একেবারেই নেই। রাজধানীর কলেজ গেট এলাকার ওষুধ বিক্রেতা ফাহিম জানান, গত সপ্তাহে কোম্পানি ড্রপ দিয়ে গেছে ৫-৬টি। তারপর দুই দিন আগে ২টি ড্রপ দিয়ে গেছে। তাদের কাছেও নাকি নেই। কিন্তু রোগী অনেক বেশি, তাই অনেককেই আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি।
মিটফোর্ড এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী রতন জানান, ১৫-২০ দিন ধরে ওষুধের চাহিদা বেড়ে গেছে, সেই তুলনায় সরবরাহ নেই। যা-ই থাকছে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ সমস্যা শুধু ঢাকায় না, সারা দেশেই এই ড্রপের সাপ্লাই কম।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘চোখ ওঠা রোগ অত্যন্ত ছোঁয়াচে। এজন্য হাত ভালো করে ধুতে হবে। যাদের চোখ উঠেছে এবং তার আশেপাশে যারা অবস্থান করবেন, তাদের ব্যাক্তিগত হাইজিন প্রতিপালন করতে হবে।’