শান্তর সেঞ্চুরিতে স্মরণীয় জয় বাংলাদেশের

খেলাধুলা

এবারে আয়ারল্যান্ড এর ম্যাচে পরতে পরতে উত্তেজনা, যে উত্তেজনা ছিল শেষ ওভার পর্যন্ত। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ৪৫ ওভারে ৩২০ তাড়া করে অবিশ্বাস্য এক জয় ছিনিয়ে নিলো বাংলাদেশ। অনেক নাটকীয়তার পর ম্যাচে শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৫ রান। হিসেবটা বেশ সহজ। কিন্তু স্বীকৃত ব্যাটার বলতে ছিলেন কেবল মুশফিকুর রহিম।

শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে বড় শটে যাননি মুশফিক। কিন্তু গ্রাউন্ডে খেলতে গিয়ে গ্যাপ বের করতে পারেননি। তাতে দুই বলই হয় ডট। ফলে সমীকরণ দাঁড়ায় ৪ বলে ৫ রানের। তবে রোমাঞ্চের আরও কিছু তখনও বাকি ছিল! তৃতীয় ডেলিভারিটি ফুলটস করতে গিয়ে হাই নো করেন লিটল, তাতে জোরে হাঁকালেও এক রানের বেশি পাননি মুশফিক। তবে নো বল হওয়ায় সবমিলিয়ে দুই রান পায় বাংলাদেশ।

তাই ৪ বলে ৪ রানের সমীকরণ মাথায় নিয়ে স্ট্রাইক প্রান্তে যান শরিফুল। ওভারের বৈধ তৃতীয় বলেই স্কুপ করে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন তিনি। ৩ বল হাতে রেখে ৩২০ রানের টার্গেট ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশের টাইগাররা।

বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৫ ওভারের ম্যাচে ৪৪ ওভার ৩ বলে ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১১৭ রান এসেছে শান্তর ব্যাট থেকে। এর আগে শুরুতে ব্যাটিং করতে নেমে হ্যারি টেক্টরের সেঞ্চুরিতে ভর করে নির্ধারিত ৪৫ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩১৯ রান তুলে আয়ারল্যান্ড। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে আইরিশদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

৩২০ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল। মার্ক অ্যাডায়ারের বলে লেগ স্কয়ারে ফ্লিক করতে গিয়ে তিনি শর্টে থাকা ফিল্ডারের তালুবন্দী হয়েছেন। সাজঘরে ফেরার আগে অধিনায়কের ব্যাট থেকে এসেছে ১৩ বলে ৭ রান। তাতে ৯ রানেই প্রথম উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা।

তামিমের বিদায়ের পর বেশ দেখেশুনেই খেলছিলেন লিটন। কিন্তু দশম ওভারে গ্রাহাম হিউমের করা অফ স্টাম্পের বাইরের বলে অযথাই খোঁচা দিয়ে বসেন তিনি। আইরিশ উইকেটরক্ষক লরকান টাকার সেটি তালুবন্দী করতে মোটেও ভুল করেননি। ২১ বলে ২১ রান করেন তিনি। তাতে ৪০ রান তুলতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ।

তবে সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসান। এই দুই বাঁহাতি ব্যাটারে ভর করে ১৬.২ ওভারে বাংলাদেশ শতরান পূর্ণ করে। তবে সাকিব ২৬ রান করে বিদায় নিলে ভাঙ্গে ৬১ রানের জুটি। তিন অভিজ্ঞ ব্যাটারকে হারানোর পর দুই তরুণ ব্যাটারে স্বস্তি ফেরে টাইগার শিবিরে। তাওহীদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে এদিন দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সমান ৪৯ বলে ব্যাক্তিগত অর্ধশতক স্পর্শ করেন দুইজনই।

এরপর হৃদয় ৬৮ রানে ফিরলে ভাঙ্গে ১৩১ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি। সঙ্গীকে হারালেও রানের চাকা সচল রাখেন শান্ত। ৮৩ বলে নিজের প্রথম সাদা বলের সেঞ্চুরি তুলে নেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। ১১৭ রান করে শান্ত যখন প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তখন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে। বাকি কাজটুকু মিরাজ-তাইজুলদের সঙ্গে নিয়ে পাকাহাতে সেড়েছেন মুশফিকুর রহিম।

এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি আয়ারল্যান্ডের। ম্যাচের আগে বৃষ্টি হওয়ায় শুরুতে বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন পেসাররা। সেটা কাজে লাগিয়ে প্রথম পাওয়ার প্লেতে বল হাতে আগুন ঝড়িয়েছেন বাংলাদেশি পেসাররা। আর তাতে খাবি খেয়েছে দুই আইরিশ ওপেনার। উইকেটের দেখা পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে মাত্র ৫ বল। ইনিংসের পঞ্চম বলটি গুড লেন্থে করেছিলেন হাসান মাহমুদ।

সেখানে বাড়তি পেইস আর বাউন্সে পরাস্ত হন পল স্টার্লিং। সিলভার ডাক খাওয়া এই ওপেনার ডিফেন্স করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। যদিও শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি। তবে তামিম ইকবাল রিভিও নিলে প্রথম ওভারেই প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ।

সপ্তম ওভারে আরও একবার হাসান ম্যাজিক। প্রথম বলটি ব্যাক অব লেন্থে করেছিলেন, সেখানে পেছনের পায়ে ভর দিয়ে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে মিরাজের হাতে ধরা পড়েন স্টিফেন ডোহেনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২১ বলে ১২ রান। তাতে ১৬ রান তুলতেই দুই ওপেনারকে হারায় আইরিশরা।

এমন বিপর্যয় থেকে দলকে টেনে তুলেন অধিনায়ক অ্যান্ডু বার্লবির্নি ও হ্যারি টেক্টর। আইরিশ অধিনায়ক ৪২ রানে ফিরে গেলে ভাঙ্গে ৯৮ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। আর তাতেই ভালো ভীত পেয়ে যায় তারা। সেখানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশি বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন টেক্টর। শেষ পর্যন্ত ১১৩ বলে ১৪০ রানে থেমেছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। ৪২তম ওভারের শেষ বলে তাকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারীতে বোল্ড করেছেন এবাদত হোসেন।

টেক্টর ফিরলেও, রানের গতি কমেনি আইরিশদের। ডকরেলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমান তালে রান তুলেছেন মার্ক অ্যাডায়ার। তিনি সাকঘরে ফেরার আগে ৮ বলে ২০ রানের ক্যামিও ইনিংস উপহার দিয়েছেন।

আর তাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে রেকর্ড ৩১৯ রানের সংগ্রহ পায় আয়ারল্যান্ড। যদিও এই ম্যাচটি ৪৫ ওভারের। টাইগারদের বিপক্ষে এর আগে তাদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ২৯২ রান। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ দুটি করে উইকেট পেয়েছেন হাসান ও শরীফুল। এছাড়া এবাদত ও তাইজুল একটি করে উইকেট নেন!

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *