সংঘের্ষের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহে গিয়ে ফের সংঘর্ষে দুই গ্রামবাসী, আহত শতাধিক

হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার নবীগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সৈয়দ তাহসিন হত্যাকান্ডের ঘটনা’কে কেন্দ্র করে দু’ গ্রামবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।

এছাড়া বেশ কয়েকটি দোকানপাট ভাংচুর, মটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরে বাহুবল সার্কেল এসপি আবুল খয়ের,নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এর নেতৃত্বে দাঙ্গা পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের নেতৃবৃন্দের কঠুর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৫টা থেকে সংঘর্ষের সূথত্রপাত হয়ে রাত ৯ টা এক টানা সংঘর্ষ চলে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, কলেজ ছাত্র তাহসিন হত্যার ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ দেখার সূত্র ধরে কুর্শি ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদুর রহমান ও পৌর কাউন্সিলর নানু মিয়ার লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে এই দুই জনপ্রতিনিধিদের নিজেদের গ্রাম এনাতাবাদ ও আনমনু গ্রামের লোকজন সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে।

এসময় চেয়ারম্যান খালেদের মালিকানাধীন রাজা কমপ্লেক্স. পুবালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক , তাহসিন প্লাজা ও আনমনু গ্রামের বেশ কয়েকটি দোকানপাঠ ভাংচুর করা হয়। সবজি বাজার ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
চার ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে উভয়পক্ষের লোকজন ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।

ব্যবসায়ীরা দোকানপাঠ বন্ধ করে দিগবিদিক ছুটোছুটি করে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ৪৫ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। রাত ৯টায় হবিগঞ্জ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ এসে রাবার বুলেট, কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। সংঘর্ষ চলাকালে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষগণ আহত হন।

সুত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে কুর্শি ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদুর রহমান খালেদের মালিকাধীন রাজা কমপ্লেক্সের পিছনে ফুড কর্নারে দু’দল কলেজ ছাত্রদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে সংঘর্ষে এক কলেজ ছাত্র নিহত হয়।

এ সময় মোটর সাইকেলে অগ্নি সংযোগসহ ৩টি সাইকেল ভাংচুর করা হয়। একাধিক দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। পাল্টা হামলায় রাজা কমপ্লেক্সের গ্লাস ভাংচুর করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড কাদাঁনো গ্যাস নিক্ষেপ করেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি। এক পর্যায়ে বাহুবলের সার্কেল এসপির নেতৃত্বে হবিগঞ্জ থেকে একদল দাঙ্গা পুলিশ আসলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদুর রহমান জানান,গত মঙ্গলবার ২৭ফেব্রুয়ারি রাতে কিছু সন্ত্রাসীরা একটি ছেলেকে শহরে নির্মমভাবে হামলা চালিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার কিছু ভিডিও ফুটেজ  হয়তো আমার মালিকানাধীন রাজা কমপ্লেক্সের সি,সি ক্যামেরা  ফুটেজে সংরক্ষণ রয়েছে৷ থানা পুলিশ এই ভিডিওটি আলামত হিসেবে সংরক্ষণ করতে চাইলে এ খবরে পুলিশ রাজা কমপ্লেক্সে উপস্থিত হওয়ার পূর্বেই পৌর এলাকার আনমনু গ্রামের কতিপয় অস্ত্রধারী লোক স্থানীয় কাউন্সিলর নানু মিয়ার লোকজন হঠাৎ রাজা কমপ্লেক্স হামলা চালিয়ে ভিডিও সিসি ফুটেজ ও আলামত নষ্ট করতে এবং সিসি ক্যামেরা মেশিন লুটপাট করে নিতে চায়। এসময় মার্কেটের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনতা তাদেরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন, একপর্যায়ে অস্ত্রধারীরা  দেশীয় অস্ত্র সশ্র নিয়ে রাজা কমপ্লেক্সে ভাংচুর করে৷

আনমনু গ্রামের পৌর কাউন্সিলর নানু মিয়া বলেন, চেয়ারম্যান জানাজার নামাজে তার গ্রামের লোকজনকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ৪৫ রাউন্ড টিয়ারশেল কাদানে গ্যাস ও ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

তিনি বলেন, সংঘর্ষে থানার ওসি তদন্তসহ ৮ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে এবং পুলিশ এসল্ট মামলার প্রস্তুতি চলছে ১৪ জন কে গ্রেপ্তার করা হয়ছে শহরে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাশ অনুপ বলেন, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *