সমন্বয়হীনতায় আটকে আছে কিনব্রিজের সংস্কার কাজ

সিলেট

অর্থ বরাদ্দ হয়েছে প্রায় আড়াই বছর আগে। কাজ শুরুর ঘোষণাও দেয়া হয়েছে কয়েকবার। তবু শুরু হচ্ছে না সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজের সংস্কার কাজ। নানা জটিলতায় আটকে যাচ্ছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এই সেতু সংস্কার বিলম্বিত হচ্ছে।

সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই কিনব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। সংস্কার কাজের জন্য ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিনব্রিজ দিয়ে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধেরও ঘোষণা দেয় রেলওয়ে বিভাগ। ১০ জুলাই সেতুটির সংস্কার কাজের সময় যান চলাচল বন্ধ রাখতে সিলেট মহানগর পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে পত্র দেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সেতু বিভাগের প্রকৌশলী জীষাণ দত্ত।

তবে নির্ধারিত তারিখে সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। সেতু দিয়ে যান চলাচলও বন্ধ হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবারও কিনব্রিজ দিয়ে আগের মতো যান চলাচল করতে দেখা গেছে।

জানা যায়, কিনব্রিজ সওজের নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও লোহার তৈরি এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ অধিক পারদর্শী। তাই জরাজীর্ণ হয়ে পড়া ৮৭ বছরের পুরোনো কিনব্রিজের সংস্কার কাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রেলওয়ের সেতু বিভাগই সংস্কার কাজ করবে। তবে কাজ শুরুর আগেই সওজ ও রেলওয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে।

ঘোষণা দিয়েও সংস্কার কাজ শুরু না হওয়া প্রসঙ্গে রেলওয়ের সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) জীষাণ দত্ত বলেন, ‘সংস্কার কাজ শুরুর জন্য আমরা প্রস্তুত। সব মালামাল কিনব্রিজ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আশা করছি সপ্তাহখানেকের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’

তিনি বলেন, কিনব্রিজে যান চলাচল বন্ধ রাখার দায়িত্ব সওজের। তারা যান চলাচল বন্ধ করে আমাদের জানাবে। এরপর কাজ শুরু করব। তবে আগেভাগে যান চলাচল বন্ধ করে দিলে জনভোগান্তি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বৃহস্পতিবার বলেন, সংস্কার কাজের জন্য রেলওয়ের ঠিকাদার এখনো সম্পূর্ণ প্রস্তুত না। তাই কিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করিনি। কারণ কাজ শুরু করতে দেরি হলে শেষ করতেও দেরি হবে। আর দীর্ঘ সময় গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু বন্ধ রাখলে জনভোগান্তি বাড়বে। তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বলেছি পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে আমাদের বলার জন্য। তখন আমরা সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেব। তারা এতে সম্মত হয়েছেন। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানাতে পারেননি।

এর আগে এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে অর্থ স্থানান্তরে জটিলতা, বন্যাসহ নানা কারণে কয়েক দফা পিছিয়ে যায় কিনব্রিজের সংস্কার কাজ।

গতকাল বিকেলে কিনব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আগের মতো চলছে যানবাহন। পথচারীরাও আগের মতোই হেঁটে পারাপার হচ্ছেন সেতু।

কিনব্রিজের উত্তর পাড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রের দায়িত্বে ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য জিষ্ণু সিংহ। তিনি বলেন, ‘আমিও শুনেছি এই সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করা হবে। কিন্তু কেউ আমাদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেনননি। তাই আগের মতোই দায়িত্ব পালন করছি।’

কিনব্রিজে যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়ে রেলওয়ে বিভাগের নোটিসে বলা হয়েছিল, ‘সিলেটের ঐতিহাসিক এই সেতুতে অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচলের কারণে বর্তমানে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির কয়েক জায়গায় যানবাহনের ধাক্কায় গার্ড রেলিং, স্টিল ট্রাস বেঁকে গেছে। কয়েক জায়গায় স্টিলের পাত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকায় জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি মেরামত করা প্রয়োজন। সংস্কারের জন্য আগামী ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিনব্রিজ দিয়ে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এ সময় জনসাধারণকে বিকল্প পথে যাতায়াতের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’

সিলেটের পরিচিতির অংশ হয়ে ওঠা কিনব্রিজ নির্মাণ হয় ব্রিটিশ আমলে। টানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল। তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় ‘কিনব্রিজ’।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, জরাজীর্ণ কিনব্রিজ সংস্কারের জন্য ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ সিলেট অফিস। ওই বছরেরই জুনে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

সিলেট নগরের মাঝামাঝি এলাকার এই সেতুটি সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও এটি দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে দুই দিকে লোহার বেষ্টনী দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে সিটি করপোরেশন। তবে নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে ৫২ দিন পর যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হয়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘কিনব্রিজ সিলেট তথা দেশের একটি এতিহ্য। সিলেটের পরিচয়বহনকারী স্থাপত্য এটি। তাই এটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যান চলাচল বন্ধ করে ফুটওভার ব্রিজে (পদচারী সেতু) রূপান্তর করার জন্য একটি প্রস্তাব আমরা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সওজকে দিয়েছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের দাবির মুখে হালকা যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ঝুঁকি বিবেচনায় ভারী যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *