ষাটোর্ব্ধ নাজিম উদ্দিন। ভিক্ষাবৃত্তিই ছিল যার পেশা। রাত পোহালেই সিলেট নগরীর আনাচে-কানাচে ভিক্ষাচর্চা করেই পরিচালনা করতেন জীবন সংসার। বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলায় হলেও থাকতেন সিলেট নগরীর বন্দরবাজারের হোটেল আল ফয়েজে। কিন্তু গতকাল রোববার দুপুরে সেই আবাসিক হোটেলের ১২ নম্বর কক্ষ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ধারণা করছে, স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
তাঁর পুরো নাম নাজিম উদ্দিন নাজির (৬০)। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজলার হরিনগর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
জানা যায়, প্রতিদিনের ন্যায় তিনি ভিক্ষাভান্ড শেষে করে শনিবার রাতে হোটেলে ঘুমিয়ে পড়েন। রবিবার সকালে ডাকাডাকি করে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। পরে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
শুধু নাজিম উদ্দিন নয়! সিলেটে মাত্র দুইদিন আগে শুক্রবার (২০ জানুয়ারী) অপর একটি আবাসিক হোটেল থেকে শাহেদ মোশারফ (৩৫) নামে আরও একজন ভিক্ষুকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়াও তার মাত্র দুদিন পূর্বে বুধবার নগরীর শাপলা আবাসিক হোটেল থেকে হোটেলের পরিচালক জহির মিয়ার সাবেক স্ত্রী নিলীমা বেগম লিলি (১৯) এর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে সিলেট নগরী থেকে ৩টি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নগরজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আর ৩টি লাশই আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার করায় আলোচনার সুর আরও ঘনিভূত হচ্ছে। এ সুর এখন নগর পেরিয়ে পুরো জেলায়। তবে ৩টি ঘটনার মধ্যে দুটি মৃত্যুই স্বাভাবিক বলে ধরে নিচ্ছে পুলিশ। তবে সাবেক স্বামীর হোটেল থেকে নিলীমা বেগম লিলি (১৯) এর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য রয়েই গেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তার সাবেক স্বামীকে খুঁজছে।
জানা যায়, বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল পৌনে ১১টার দিকে দক্ষিণ সুরমার বাইপাস রোডের মোমিনখলা এলাকায় শাপলা আবাসিক হোটেল থেকে তার লাশটি উদ্ধার করা হয়। হোটেল কর্মচারীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হোটেলের দ্বিতীয় তলার ১০৫ নং কক্ষের দরজা ভেঙে লিলি নামের ওই নারী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত নিলীমা বেগম লিলি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দুলিয়ারবন্দ গ্রামের নুরুল হকের মেয়ে এবং ওই আবাসিক হোটেলের পরিচালক জহির মিয়ার সাবেক স্ত্রী।
আবাসিক হোটেলের পরিচালক জহির মিয়ার সাথে লিলি অনেকদিন আগে ছাড়াছাড়ি হলেও জহিরের সঙ্গে যোগাযোগ বা মেলামেশা ছিলো সব সময়। লাশ উদ্ধারের সময় তার শরীরে কোনা আঘাতের চিহ্ন পায় নি পুলিশ।
রোববার রাতে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, এঘটনার পর থেকে হোটেল পরিচালক জহির পলাতক রয়েছে। সে সিলেটের বাইরে অবস্থান করছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে তৎপর রয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় নিলীমা বেগম লিলির বাবা বাদী হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান তিনি।
অপরদিকে শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে বন্দরবাজারের লালবাজারে অবস্থিত লাভলী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট থেকে অপর ভিক্ষুক শাহেদ মোশারফ (৩৫) এর লাশ উদ্ধার করা হয়। মোশারফ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও মিয়াপাড়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে।
সে লালবাজারে অবস্থিত লাভলী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিল। শুক্রবার সকাল থেকে তিনি শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করেন। রুমের মধ্যেই বিশ্রামে ছিলেন কিন্তু এইদিন দুপুরের দিকে খবর পেয়ে পুলিশ হোটেলের ২৫ নম্বর কক্ষ থেকে লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের সময় তার কাছ থেকে যক্ষা রোগের চিকিৎসার বিভিন্ন কাগজ পাওয়া যায়। পুুলিশ ধারণা করছে তিনি যক্ষা রোগী ছিলেন ও শারীরিক অসুস্থতার কারণেই মৃত্যুবরণ করেন।
শেয়ার করুন