সিলেটে কথায় কথায় ধর্মঘটের ডাক শ্রমিক নেতাদের

সিলেট

সিলেটের পরিবহন খাতে একসময় অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক। ১৫-১৬ বছর দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য মতে, কথায় কথায় পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা ছিল তাঁর নেশা।২০১৪ সালের পর জেলা ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নে আবির্ভাব ঘটে আবু সরকারের। তিনিও কথায় কথায় ট্রাক শ্রমিকদের মাঠে নামান।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফলিককে টপকে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নতুন দায়িত্বে আসেন মইনুল ইসলাম। আশা করা হয়েছিল হয়তো সিলেটের পরিবহন খাতে একটি পরিবর্তন আসবে। তবে তাঁর সময়েও গত দুই বছরে তিন-চারবার ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।গত ১০ বছরে অন্তত ২০০ দিন ধর্মঘটের ডাক দেন শ্রমিক নেতারা। বাস আটকানোর প্রতিবাদে সর্বশেষ সোমবার থেকে সিলেট-তামাবিল সড়কে ধর্মঘট শুরু করে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বৈঠকে বসে শ্রমিক নেতারা বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট জেলাজুড়ে বিস্তৃত করার ঘোষণা দেন।

জানা গেছে, এর আগে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি, গত বছরের ২২ নভেম্বর, ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিসহ একাধিক দিন ধর্মঘট পালন করা হয়। মামলা কিংবা পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার, পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া, সড়ক আইনের সংশোধন এবং চাঁদাবাজি, অনুমোদনহীন ইজিবাইক ও অটোরিকশা বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে এসব ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ট্রাফিক কিংবা হাইওয়ে পুলিশ গাড়ি আটকে দেওয়া, এমনকি শ্রমিক নেতার জামিন না দেওয়ার কারণেও কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কখনও আধিপত্য বিস্তার, কখনও সরকারকে চাপে ফেলা, কখনও বা নিজের স্বার্থ কিংবা শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য এসব ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলোর শাখা-উপশাখা বেশি এবং অতিরিক্ত নেতা এর পেছনের কারণ বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ একজন শ্রমিক নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, অনেক বিষয় রয়েছে, যা আলোচনা করে সমাধান করা যায়।তার পরও ধর্মঘট ডাকা হয়।১০টি ধর্মঘট হলে দেখা গেছে আটটিই অযৌক্তিক। নিজেদের ক্ষমতা ও স্বার্থের জন্য তা করা হয়।

দুই দশক আগে সিলেটে পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠন ছিল সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি-১৪১৮)।একই সময়ে মালিকদের সংগঠন ছিল সিলেট জেলা মোটর মালিক গ্রুপ। বর্তমানে জেলা বাস-মিনিবাস কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন (সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন), জেলা ট্রাক পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন, জেলা হিউমেন হলার সমিতি, জেলা অটো-টেম্পো-অটোরিকশাচালক শ্রমিক জোট, ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নসহ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। একইভাবে রয়েছে মালিকদের সংগঠনও। শ্রমিক সংগঠনগুলোর কয়েকশ শাখা ও উপশাখা রয়েছে। কারণে-অকারণে ওই শাখার নেতাদের মাঠে নামান জেলার নেতারা।

সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন যাত্রী নিহতের ঘটনায় জৈন্তাপুর ১৭ পরগনা ধর্মঘটের ডাক দিয়ে আবার প্রত্যাহার করে। কিন্তু সোমবার থেকে পরিবহন শ্রমিকরা তাদের বাস আটকের অভিযোগে পাল্টা ধর্মঘটের ডাক দেয়।

১৭ পরগনার নেতা ও জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ বলেন, পাঁচ যাত্রী নিহতের ঘটনায় শ্রমিক নেতারা সহানুভূতি না দেখিয়ে উল্টো ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। শ্রমিক নেতাদের কথায় কথায় ধর্মঘট কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানতে চাইলে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, আমরা যতবারই ধর্মঘট ডেকেছি তার পেছনে কারণ রয়েছে। দাবি আদায় কিংবা সমস্যা সমাধানে বাধ্য হয়ে কর্মসূচি দিয়েছি।

ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির আহমদ ফয়েজ বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নগুলো ধর্মঘট কালচার থেকে বের হতে পারেনি। নিজেদের অধিকার আদায়ের চেয়ে স্বার্থসিদ্ধির জন্য বেশিরভাগ ধর্মঘট ডাকা হয় বলে মনে করেন তিনি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট জেলা সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে প্রায়ই অযৌক্তিক ধর্মঘট ডাকেন শ্রমিক নেতারা। তাদের আগে প্রশাসনের সঙ্গে বসা উচিত।-সমকাল

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *