অন্যান্য সময়ে গ্রামাঞ্চলেই বেশি লোডশেডিং থাকলেও সিলেটে এবার শহরের মানুষেরাই বিদ্যুৎ নিয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। গত কয়েকদিন ধরেই সিলেটে নগর এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ মিলছে না। ফলে দিনের বেশিরভাগ সময়ই লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ঈদের ব্যবসার সময়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ তুলনামূলক ভালো।
হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়া, ঈদের সময়ে বিভিন্ন শপিং মহলে আলোকসজ্জ্বার কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শহরাঞ্চলে বিদ্যুতের ঘাটতি বাড়ায় লোডশেডিংও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট নগরসহ শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সিলেটে পিডিবির সাড়ে চার লাখ গ্রাহক রয়েছেন। এরমধ্যে নগরেই রয়েছেন প্রায় সোয়া দুই লাখ গ্রাহক।
পিডিবির সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটে বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ১৪৪ মেগাওয়াট। এরমধ্যে সরবরাহ মিলেছে ৭০ মেগাওয়াট। ফলে পিডিবির হিসেবেই দিনের বেশিরভাগ সময় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
চলতি মাসের শুরু থেকেই লোডশেডিং বেড়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা। প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে । দিন-রাতে আট থেকে দশবার বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে নগরবাসীকে। লোডশেডিং হচ্ছে সেহরি ও ইফতারের সময়ে।
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার ব্লু ওয়াটার শপিং সিটির ব্যবস্থাপক মলয় দত্ত মিঠু বলেন, বছরের এই সময়টাতে একটু ভালো ব্যবসা হয়। অথচ এবার লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসার অবস্থা খারাপ। দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। রাতের অবস্থা তো আরও করুণ। জেনারেটর দিয়ে মার্কেটের সব এসি-লিফট চালানো সম্ভব হয় না। এতে ক্রেতারাও দুর্ভোগে পড়ছেন।
সেহরি এবং ইফতারের সময়ও লোডশেডিং হচ্ছে জানিয়ে নগরের যতরপুর এলাকার গৃহিণী রোখসানা খানম বলেন, বিদ্যুতের কারণে তো রান্নাবান্না করারই কোন উপায় নেই। একে তো গরম, তারউপর সারাদিনই বিদ্যুৎ থাকে না। এমনকি সেহরি বা ইফতার শুরু হলেও বিদ্যুৎ চলে যায়। একেবারে দুর্বিষহ অবস্থা। গরম আরও বাড়লে যে কী অবস্থা হবে, এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
পিডিবির সিলেট অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যেও মিলেছে লোডশেডিংয়ের এমন ভয়াবহ চিত্র। সিলেটে বুধবার পিডিবি’র বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ মেগাওয়াট। আর সরবরাহ ছিলো ৬৬ মেগাওয়াট। মঙ্গলবার চাহিদা ছিলো ১৪১ মেগাওয়াট আর সরবরাহ করা হয় ৫৬ মেগাওয়াট।
এদিকে, লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যেও বাড়ছে ক্ষোভ। বিদ্যুতের দাবিতে মঙ্গলবার রাতে সড়ক অবরোধ করেছেন সিলেটের ওসমানীনগরের গ্রাহকরা। এরআগের রাতে দক্ষিণ সুরমায় পিডিবির অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিতের ঘটনাও ঘটেছে। এমন অবস্থায় পিডিবিরি সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের পক্ষ থেকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া পোস্টে বলা হয়- ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় লোডশেডিং এর পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। এতে বিতরণ ব্যবস্থার কোন দায় নেই। বিতরণ অঞ্চল, সিলেট এর আওতাধীন সকল দপ্তর শুধু বিদ্যুৎ বিতরণ করে। জেনারেশন না থাকলে বিদ্যুৎ এর লোডশেডিং থাকবে। গ্রাহকদের প্রতি অনুরোধ বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করুন। বিদ্যুৎ বিতরণকারী দপ্তর ও এর বিদ্যুৎ কর্মীদের সাথে বাজে আচরণ এবং অযথা বাজে ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।’
এরআগে বুধবার একই পেজ থেকে দেয়া পোস্টে উল্লেখ করা হয়- ‘বরাদ্দের তুলনায় বিদ্যুৎ প্রাপ্তি কম হওয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রচণ্ডভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সম্মানিত গ্রাহকগণকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ করছি।’
এ ব্যাপারে পিডিবি, সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, ঈদের মৌসুম হওয়ায় বিপণি-বিতানসহ অনেক স্থানে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ফলে শহর অঞ্চলে এখন বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। এছাড়া গরমও অনেক বেড়েছে। কিন্তু চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন কম হচ্ছে। তাই সরবরাহ কমে গেছে। একারণে লোডশেডিং বেড়ে গেছে। গরম আরও বাড়লে লোডশেডিং আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
শহর এলাকায় চাহিদার অর্ধেক সরবরাহ না মিললেও বৃহস্পতিবার গ্রামাঞ্চলের চিত্র তুলনামূলক ভালো ছিলো। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো আখতারুজ্জামান লস্কর জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তার আওতাধীন এলাকায় চাহিদা ছিলো ৬৪ মেগাওয়াট আর বরাদ্দ মিলেছে ৫৩ মেগাওয়াট।
অপরদিকে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জিব কুমার রায় জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে ২৭ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ মিলেছে ২৩ মেগাওয়াট।
পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা ও যোগানের তেমন পার্থক্য না থাকলেও ভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছেন গ্রাহকরা। সিলেটের বিশ্বনাথের রামপাশা এলাকার গ্রাহক দিপক দেব বলেন, বৃষ্টি একটু বাতাস শুরু হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়। কখনো সারারাতও বিদ্যুৎ থাকে না।
শেয়ার করুন