মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম: সিলেট জেলা পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম আর মাত্র কয়েকদিন সিলেটে আছেন। তিনি খুব শিঘ্রই পদোন্নতি নিয়ে চলে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম। সিলেটে দ্বায়িত্ব পালনকালে তাঁর বেশ কিছু কাজ সুধী মহলে ব্যাপক প্রসংশা কুড়িয়েছে। বিশেষ করে ঘুস ছাড়া পুলিশে নিয়োগ তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে বহুগুণে।
পদোন্নতি নিয়ে চট্টগ্রাম যাবার পূর্ব মুহুর্তে সিলেট পুলিশ লাইন্সে লোকচক্ষুর অন্তরালে পড়ে থাকা ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবরের স্মৃতি ধরে রাখতে উদ্যোগ নেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এখানে শহীদদের স্মরণে নির্মাণ করেন স্মৃতিস্তম্ভ। রােববার (৭ আগস্ট) দুপুরে ‘স্মৃতি ৭১’ নামের নবনির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত ঐতিহাসিক এই গণকবরের উপর নির্মিত ‘স্মৃতি ৭১’র উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজন করা হয় এক অনুষ্ঠানের।
সিলেট জেলা পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ পিপিএম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার নিশারুল আরিফ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমেদ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি আল আজাদ, সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ, সিনিয়র সাংবাদিক ইকরামুল কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব সভাপতি মুহিত চৌধুরী, সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ভবতোষ রায় বর্মণ রানা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ পিপিএম বক্তব্যের ফাঁকে নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে শুনান।
বীর মুক্তিযােদ্ধা ও স্থানীয় ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের পরপরই গণকবরটি চিহ্নিত করা হয়। পার্শ্ববর্তী মুন্সিপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার বীর মুক্তিযােদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করে ফেলে রাখে। পরে এসব শহীদের মরদেহ এনে স্বজন ও পরিচিতজনেরা পুলিশ লাইনসের ভেতরে একটি ডােবায় গণকবর দেন। কতজনকে বাকাদের এখানে গণকবর দেওয়া হয়েছে, এমন সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও সংরক্ষিত নেই। তবে এখানে গণকবর দেওয়া আটজন শহীদের নাম-তথ্য জানা গেছে গণকবরে শায়িত যে আটজন শহীদের নাম সংরক্ষিত আছে, তাঁরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক আবদুল লতিফ, হাবিলদার আবদুর রাজ্জাক, কনস্টেবল মােক্তার আলী, শহর আলী, আবদুস ছালাম, মাে. হানিফ ব্যাপারী, মনিরুজ্জামান ও পরিতােষ কুমার।
এসব পুলিশ সদস্য ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল নগরের জিন্দাবাজার এলাকার তকালীন ন্যাশনাল ব্যাংকে (বর্তমানে সােনালী ব্যাংক) দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্যাংকের টাকা লুটের উদ্দেশ্যে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করেছিল। পরে ৬ এপ্রিল এসব শহীদকে পুলিশ লাইনসে গণকবর দেওয়া হয়। আট পুলিশ সদস্যকে যেদিন ব্যাংকে হত্যা করা হয়, এর পরের দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে শহীদদের মরদেহ প্রত্যক্ষ করেছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযােদ্ধা সংসদ সিলেট মহানগরের সাবেক কমান্ডার ভবতােষ রায় বর্মণ রানা। ওইসময়ের প্রত্যক্ষদর্শী এ মুক্তিযােদ্ধা বলেন, নৃশংসভাৰেপুলিশ সদস্যদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মূলত ব্যাংকের ভন্ট লুট করতে চেয়েছিল তারা।’
একাধিক বীর মুক্তিযােদ্ধা জানান, ন্যাশনাল ব্যাংকে শহীদ হওয়া পুলিশ সদস্যদের পুলিশ লাইনসে গণকবর দেওয়া হয়। এছাড়া ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পুলিশ লাইনসে ভেতরের ছবি সংগ্রহকরতে গেলে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিত গুলি চালিয়ে একাধিক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। তাদেরও এখানে গণকবর দেওয়া হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় নথিপত্র বিনষ্ট হওয়ায় এসব পুলিশ সদস্যের নাম সংরক্ষিত হয়নি। এর বাইরে শহরে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহীদ অনেককেও এখানে কবর দেওয়া হয়েছে।
শেয়ার করুন