সরকারের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি জিম্মি করে রেখেছেন গুটি কয়েক কর্মকর্তা। সিলেট সার্কেলটিতে চলতি দায়িত্বে থাকা সহকারি পরিচালক (ইঞ্জি:) রিয়াজুল ইসলাম এবং মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারী ও দেলোয়ার হোসেন সেবা প্রদানের নামে সেবা গ্রহিতাদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করছেন।
রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহনের মালিকানা বদলীসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণকালে নানা অজুহাতে মালিক ও পরিবহণ শ্রমিকদের হয়রানী করেন এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
২০২২ সালের অক্টোবরে সিলেটের পুলিশ কমিশনার ও মেট্টো আরটিসির সভাপতির সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট জেলায় রেজিস্ট্রেশনকৃত সিএনজি অটেরিকশার সংখ্যা ২১ হাজার ২৩২টি। ১০, ০১২ সিলেট-থ-১১, ১০, ০১২ থেকে সিলেট-থ-১২ সিরিয়াল এবং ১০, ০১৩ থেকে সিলেট-থ-১৩ সিরিয়ালের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। এরমধ্যে অর্ধেক সংখ্যক সিএনজি অটোরিকশা মেট্টো এলাকার বাইরে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। অথাৎ সিলেট জেলার ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশন ইস্যু করা হয়েছে।
গত বছরের ২ অক্টোবর মেট্টো আরটিসির সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়- ‘সিলেট জেলার ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশনকৃত সিএনজি অটোরিকশার মালিকগণ মেট্টো ঠিকানায় বদলী হতে পারবে না।’ কিন্তু এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেছেন সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিঃ) রিয়াজুল ইসলাম।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে ৫০/৬০ হাজার করে গ্রহণপূর্বক এমআরটিসির সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে অবৈধভাবে মালিকানা বদলী করেছেন। মালিকানা বদলীর বিষয়টি সিলেট সিএনজি অটোরিকশার মালিক ও অন্যান্য ব্যক্তি এই অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে জানাজানি হওয়াতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
সূত্র জানায়, কেবল ২ মাসে অন্তত ৫৫ টি সিএনজি অটোরিকশার মালিকানা জেলা থেকে মেট্টোতে বদলী করার বিষয়টি ধরা পড়েছে। নিয়ম বহিঃভর্‚তভাবে প্রতিটি থেকে ৫০/৬০ হাজার টাকা সুবিধা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট-থ-১১ সিরিয়ালের ২১টি ও সিলেট-থ-১২ ডিজিটের নাম্বার প্লেটের ৩৪টি সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দিয়ে অন্তত ৩৩ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।
অনৈতিক সুবিধা নিতে প্রায় ১৮ বছর আগের পুরোনো সিলেট-থ ১১ নাম্বার প্লেটের সিএনজি অটোরিকশার মালিকানা বদলী করা হয়েছে।
অথচ ঢাকা ও চট্রগ্রাম বিভাগে ১১ সিরিয়ালের এসব দেড় দশক পুরোনো সিএনজি অটোরিকশা রোড পারমিট না দেওয়া নির্দেশনা থাকলেও সিলেটের বেলায় এটি কার্যকর করা হয়নি।
ইতোমধ্যে কৌশলে টাকার বিনিময়ে সিলেট-থ-১২ সিরিয়ালের পাশাপাশি সিলেট-থ- ১২ সিরিয়ালের পাশাপাশি ১১ সিরিয়ালের মালিকানা জেলা থেকে মেট্টোতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
অথচ ২০২২ সালের ২ অক্টোবর মেট্টো আরটিসির সভায় জেলা থেকে মেট্রোতে মালিকানা বদলী না করার সিদ্ধান্ত হয় বিআরটিএ সিলেটের সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিঃ) রিয়াজুল ইসলামের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে। আবার সেই সিদ্ধান্ত নিজেই উপেক্ষা করলেন সহকারি পরিচালক। এ কাজে তিনি ছাড়া মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারী ও দেলোয়ার হোসেন জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেছে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, এই তিন কর্মকর্তা মিলে এমন অনিয়ম করেছেন। গত বছরের অক্টোবর থেকে মেট্টো আরটিসির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মাসে এভাবে অন্তত ২শ’র অধিক গাড়ির মালিকানা জেলা থেকে নগরে পরিবর্তন করেছেন। এর মাধ্যমে এই একটি খাত থেকে অন্তত কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে অবৈধভাবে উপার্জন করতে গিয়ে সেবা নিতে যাওয়া সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুব্যবহার করেন, এমন নজির রয়েছে অহরহ। এমনকি সাংবাদিকরা তথ্য চাইতে গেলেও নানা অজুহাতে তাদের নিরুৎসাহিত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিআরটিএ সিলেট সার্কেলের অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিরোধে সড়ক পরিবহণ মালিক শ্রমিকরা গত বছরের ৯ এপ্রিল ধর্মঘটের ডাক দেয়। যদিও প্রশাসনের অনুরোধে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যেই ওই বছরের ১২ এপ্রিল বিআরটিএ সাবেক সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিঃ) বদলী হন। আর সেই সুযোগে সহকারি পরিচালকের চলতি দায়িত্ব পান রিয়াজুল ইসলাম। তিনি চলতি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নেমপ্লেটসহ সরকারি দফতরগুলোতে পত্র আদান-প্রদানে সহকারি পরিচালক ইঞ্জিঃ লিখে থাকেন। যা সরকারি চাকুরীর বিধি পরিপন্থী।
এদিকে, সিলেট পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকগণ এবং সেবা নিতে আসা গ্রহকরা ওই তিন কর্মকর্তার ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তারা এই তিন কর্মকর্তার বদলীর দাবি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রাহকরা বলেন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় মালিকানা বদলীসহ রেজিস্ট্রেশন দিতে তার অনুগত কর্মচারিকে রেজিস্ট্রেশন শাখায় নিয়ে আসেন সহকারি পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম। তিনি নিজেও সহকারি পরিচালকের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে অন্তত অর্ধ শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা অনৈতিকভাবে মালিকানা বদলী করে নিয়ে প্রায় ২০/২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
বিআরটিএ সিলেট সার্কেলের এই তিন কর্মকর্তা মিলে নিজস্ব দালাল মাধ্যমে ঘুষ-বাণিজ্যসহ সব ধরণের অপকর্ম করে থাকেন। তারা তিনজনে মিলে সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধনের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের পরিকল্পনা হাতে নিলে পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকরা মিলে এই প্রক্রিয়া প্রতিহত করেন।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, সিলেটে চোরাইকৃত ও স্ক্র্যাপ করা সিএনজি অটোরিকশা একটি বড় অংশও প্রতিলিপি দিয়ে জায়েজ করে নিয়ে কয়েক কোটি টাকা আদায় করে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিআরটিএ সিলেট সার্কেলের সহকারি পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, জেলা থেকে মেট্টোতে যেসব সিএনজি অটোরিকশা মালিকানা বদলী করা হয়েছে। সেগুলো অনলাইনে প্রক্রিয়াধীন ছিল, কেবল অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই কাজের বিপরীতে কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা নেওয়া হয়নি। তবে এমআরসিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা থেকে মালিকানা বদলী প্রক্রিয়া বন্ধের বিষয়টিও স্বীকার করেন তিনি।
সুত্রঃ শ্যামল সিলেট