রাসেল আহমদ::::
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু এ আইনের আওতায় দেশের আটটি সাইবার ট্রাইব্যুনালে সাড়ে পাঁচ হাজার মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে সিলেটে ৪ শতাধিক। এছাড়া সিলেটসহ সারা দেশে সাইবার ট্রাইব্যুনালের এক হাজার মামলা রয়েছে অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বদলে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন হচ্ছে, তাতে আগের আইনের অনেক ধারার সাজা কমছে। তাই চলমান মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ এবং এ আইনের মামলার আসামিরা প্রস্তাবিত নতুন আইনে কোনো সুবিধা পাবেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দেশে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ অনুযায়ী, যখন যে আইনে মামলা হয়, বিচারও সে আইনের আওতায় হয়। কিন্তু সরকার নির্বাহী আদেশে অনেক বিষয় বাতিল বা শিথিল করতে পারে। সংসদও ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে ঘুরেফিরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত অনেক ধারা রাখা হলেও আগের আইনের কয়েকটি ধারার সাজা কমানো হয়েছে। এর ফলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জামিন অযোগ্য ধারায় যারা কারাগারে রয়েছেন, তাদের অনেক স্বজন প্রস্তাবিত আইনের ধারা প্রয়োগ করে দ্রুত জামিনের দাবি জানিয়েছেন।
অনেক বিশ্লেষক বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন আছে, এটি বিতর্কিত হয়ে গেছে। তাই এর আওতায় করা সব মামলা বাতিল করাই শ্রেয়।
আবার অনেক আইনজ্ঞের মতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আদালত তাঁর বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগের সময় সাজা কম দেওয়ার যে বিষয়টি রয়েছে, সেটি প্রয়োগ করতে পারেন। তাহলে অনেক বিতর্কের অবসান হতে পারে।
বিশ্বায়নের এই যুগে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যাপক জনপ্রিয়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড এবং মানুষের ভাবের আদান-প্রদানে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউবসহ নানা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার হচ্ছে। তবে এর ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অপব্যবহারও বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও বিচারের জন্য ২০০৬ সালে তথ্যপ্রযুক্তি তথা আইসিটি আইন করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। কিন্তু আইন প্রণয়নের পর এর কার্যক্রম থমকে থাকে। ২০১৩ সালে সাইবার আইনের আওতায় করা মামলা বিচারের জন্য ঢাকায় সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল আরও সাতটি বিভাগীয় শহরে সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। পরে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগে দায়ের করা অনিষ্পন্ন মামলা সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
সিলেটে সাইবার ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুর হয় ২০২১ সালের ১ এপ্রিল। ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) পদে পদায়ন করা হয় আবুল কাশেমকে। ওই বছরের ১ এপ্রিল থেকেই তিনি সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সুপ্রিম কোর্টের গোপনীয় শাখার পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের আটটি বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে ৫ হাজার ৫১২টি মামলা বিচারাধীন। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট মামলা হয় ৭ হাজার ৬৬৪টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ৫৫টি। দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলাই বেশি।
সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, সাইবার ট্রাইব্যুনালগুলোর মধ্যে ঢাকায় ২ হাজার ১৪১টি, সিলেটে ৪৩৪, চট্টগ্রামে ১ হাজার ৪০৫, রাজশাহীতে ১৫৬, খুলনায় ৩৫৪, বরিশালে ৩৮১, রংপুরে ৪০০ ও ময়মনসিংহে ২৪১টি মামলা এখন বিচারাধীন। এর মধ্যে তদন্তাধীন মামলা ৭৪৬টি। পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে বিচারাধীন ২৪৭টি মামলা। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ৭৬ মামলার কার্যক্রম।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আটটি সাইবার ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ৫৫টি। তবে অধিকাংশ মামলা বিচার চলাকালে বাদী-বিবাদীপক্ষের মধ্যে আপসে নিষ্পত্তি হয়। আপসের বাইরে যেগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে, তাতেও সাজা কম হয়েছে। তবে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই মামলার অধিকাংশ আসামিকে কারাগারে যেতে হয়েছে। পুলিশের রিমান্ডেও থাকতে হয়েছে।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। তবে আইনের অবস্থান হলো, যেসব মামলা পুরোনো আইনে হয়েছে, সেই পুরোনো আইনে যে শাস্তি, সেই শাস্তি অপরাধীকে দিতে আদালত বাধ্য। কিন্তু প্রস্তাবিত (সাইবার নিরাপত্তা আইন) আইনে যেহেতু শাস্তি অনেকাংশে কমানো হয়েছে, সেই কমানোটিই সরকার ও আইনসভার উদ্দেশ্য। তাই সেই কমানো যাতে বাস্তবায়িত হয়, সেই চেষ্টা করা হবে
শেয়ার করুন