আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগই ইতোমধ্যে হবিগঞ্জের ৪টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।এবারের নির্বাচন এমনভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেখানে আওয়ামী লীগের জয় নিয়ে কোনরকম সংশয় নেই। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, যেমন জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম তারা নির্বাচনের দ্বিতীয় হওয়ার লড়াই করছে। কিন্তু কেউই নির্বাচনে জয়লাভ করবে এমন কোন আশাবাদ ব্যক্ত করছেন না।
কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং আছেন। তারাই এবার অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর ফলে এবারের নির্বাচন শুরু থেকেই জমে উঠেছে।
হবিগঞ্জের ৪টি আসনের মধ্যে ৩টি আসনেই দেখা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থীর চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেক বেশি আলোচিত। ২জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের মধ্যে একজন বেশি আলোচিত, গুরুত্বপূর্ণ এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে তারা কোণঠাসা করে ফেলতে পারেন এমন আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে। এই সমস্ত প্রার্থীকে নিয়ে আজকের প্রতিবেদন।
আইনজীবী সায়েদুল হক চৌধুরী সুমন:
হাইকোর্টের আলোচিত আইনজীবী সায়েদুল হক চৌধুরী সুমন। প্রায়ই ফেসবুক লাইভে নানা বিষয়ে কথাবার্তা বলতে বা সরব হতে দেখা যায়। এক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ”ব্যারিস্টার সুমন” হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত লাভ করেন। ব্যারিস্টার সুমন ২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে যোগদান করেন।
ওই সময়ে ব্যারিস্টার সুমন আলোচনায় না আসলেও আইন পেশার পাশাপাশি স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা ব্রিজ নির্মাণ, ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন, এলাকার বিভিন্ন দুর্নীতি-অসঙ্গতি তুলে ধরাসহ ফেসবুকে বিভিন্ন সময় জনসচেতনতামূলক ভিডিও ও ফেসবুক লাইভ করে আলোচনায় আসেন এই ব্যারিস্টার।
পরবর্তীতে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে সময় দিতে না পারায় ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে পদত্যাগ করেন সুপ্রিমকোর্টের আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক চৌধুরী সুমন।
২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর শরীয়তপুরের পালং মডেল থানার ওসি আক্তার হোসেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালের জন্মদিনের একটি অনুষ্ঠানে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দেন। ৬ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ওসির এই স্লোগানের সমালোচনা করেন ব্যারিস্টার সুমন। এরপর জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’ নিয়ে কটাক্ষ করায় ও সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় তাকে যুবলীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
নানাভাবে আলোচনায় আসা ব্যারিস্টার সুমন এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন হবিগঞ্জ-৪ আসনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন পাননি। তার বদলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলীকে।
নির্বাচনের মাঠে ব্যারিস্টার সুমন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দেবেন এমনটি এখন থেকেই বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে।
ব্যারিস্টার সুমন নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সকলকে বিস্মিত করেছেন। এই আসনে ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে পেরে ওঠা কষ্টকর হবে বলেই মনে করছেন অনেকে।
আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী:
আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। পেশায় আইনজীবি এই নারী সদস্য প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা মানিক চৌধুরী কণ্যা হবিগঞ্জ সিলেটের নারী আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এবার হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি।
তার বদলে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মুশফিক হোসনে-১ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী এখন পাল্টা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এই নির্বাচনী এলাকাতে নিঃসন্দেহে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী আলোচিত নাম। জাতীয়ভাবেও তিনি একজন পরিচিত ব্যক্তিত্ব। এই আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন জমিয়ে ফেলবেন বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান:
আব্দুল মজিদ খান হবিগঞ্জ-২ আসন থেকে তিন বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু হবিগঞ্জ -২ আসন থেকে এবার তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তার বদলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েলকে।
আব্দুল মজিদ খান হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধরাণ সম্পাদক। তিনি এলাকাতেও অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তিন বারের এমপি থাকার কারণে স্থানীয় পর্যায়ে তার শক্ত নেটওয়ার্ক রয়েছে।
এই অবস্থায় তার নির্বাচনী আসনে এডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েলকে প্রার্থী করা হয়েছে। এ আসনে এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে লড়াই করবেন।
এডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল সাবেক এমপি মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদ এর ছেলে। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে এবং রাজনৈতিক পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা এডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এর চেয়ে কম নন, স্থানীয় পর্যায়ে তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
শেয়ার করুন