হবিগঞ্জে সক্রিয় মোটর সাইকেল চোর সিন্ডিকেট

হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

হবিগঞ্জ শহরে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মোটর সাইকেল চোর সিন্ডিকেট চক্র। গত ১ বছরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা সদর হাসপাতাল এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের প্রায় অর্ধশতাধিক মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ওই সিন্ডিকেট চক্রের কোন সদস্যকে সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এতে একদিকে মোটর সাইকেল চালকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতংক। অন্যদিকে চোরাইকৃত সাইকেল উদ্ধারে প্রশাসনের তৎপরতা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
এদিকে, সর্বশেষ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভিতর থেকে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি রাসেল চৌধুরীর মোটর সাইকেল চুরির ১০ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখনো উদ্ধার করতে পারেনি। যদিও সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সদর মডেল থানা পুলিশ।

জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র জেলা সদর হাসপাতাল এলাকা ও প্রশাসনের নাকের ডগায় অবস্থিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। এসব এলাকা থেকে সাম্প্রতিক সময়ে মাঝে মাঝে মোটর সাইকেল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে একটি সাইকেল চোর সিন্ডিকেট চক্র। শুধু তাই নয়, শহরের বিভিন্ন এলাকায় চক্রটি একে অপরের সহযোগিতায় সাইকেল চুরি অব্যাহত রেখেছে। গত ২ আগষ্ট রাত সাড়ে ৯ টায় শহরের ২নং পুল এলাকা থেকে হবিগঞ্জ সমাচারের স্টাফ রিপোর্টার সজল খানের সুজুকি জিক্সার এবিএস মোটর সাইকেলটি চুরি করে নিয়ে যায় সিন্ডিকেট চক্রটি। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টায় সুলতান মাহমুদপুর এলাকা থেকে মোঃ ফরহাদ মিয়া নামে এক যুবকের সুজুকি জিক্সার, সম্প্রতি মশাজান বাজার থেকে তেঘরিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আনু মিয়ার সুজুকি জিক্সার ও হবিগঞ্জ শহর থেকে মশাজান গ্রামের জয়নাল আবেদীন জালালের একটি মোটর সাইকেল চুরি হয়। তাছাড়া সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভিতর থেকে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি ও দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাসেল চৌধুরীর নীল রংয়ের পালসার (হবিগঞ্জ ল- ১১. ০৬৭৭) মোটর সাইকেলটি চুর করে নিয়ে যায় সিন্ডিকেট চক্রটি। তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত চোরাইকৃত এসব সাইকেলের একটিও উদ্ধার করতে পারেনি।

গত ১ বছরের শহর থেকে সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের প্রায় অর্ধশতাধিক মোটর সাইকেল চুরি হয়েছে বলে ধারণা করছেন শহরবাসী।

এদিকে, সাইকেল চুরির ঘটনায় এ পর্যন্ত থানায় কয়টি জিডি হয়েছে জানতে চাইলে সে তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ। তবে ইদানিং সময়ে ৫/৭টি সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তাছাড়া এর আগে ২০২১ সালে শহরে মোটর সাইকেল চুরির হিড়িক পড়ে। এতে অনেক জনপ্রতিনিধিসহ অনেকের সাইকেল চুরি করে নিয়ে যায় সিন্ডিকেট চক্রটি। এর মধ্যে ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারী শহরতলীর তেঘরিয়া এলাকা থেকে সাংবাদিক সাইফুর রহমান তারেকের ডিসকভার (হবিগঞ্জ-হ-১১-৫৪২০) চুরি করে নিয়ে যায় চক্রটি। এর পর ৩ ফেব্রæয়ারী হবিগঞ্জ ডায়াবেটিস হাসপাতাল এলাকার মাহমুদাবাদ থেকে ২ দুটি মোটর সাইকেল চুরি হয়। ২৮ এপ্রিল ২০২১ হবিগঞ্জ শহরের নতুন বাস টার্মিনাল এলাকার হাসি-খুশি শো-রুমের সামন থেকে দিনে দুপুরে মোটর সাইকেল চুরি করে নিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা। তাছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভিতর থেকে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান আউয়ালের বাজাজ মোটর সাইকেল চুরি করে ওই সিন্ডিকেট চক্রটি। এসব ঘটনায় সদর মডেল থানায় প্রত্যেকেই সাধারণ ডায়েরী করেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় দিন দিন মোটর সাইকেল চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় চালকদের মধ্যে আতং বিরাজ করছে। শহরের মোটর সাইকেল চুরি নিয়ন্ত্রনে পুলিশের তৎপরতা জোরদার করণের দাবী সচেতন মহলের।

শহরের ২নং এলাকার সাংবাদিক সজল খান বলেন, ‘গত ২ আগষ্ট রাত সাড়ে ৯ টায় বাসার বারান্দা থেকে আমার সুজুকি মোটর সাইকেলটি চুরি হয়। এ বিষয়ে আমি পরের দিন সদর থানায় জিডি করেছি। তবে এখন পর্যন্ত সাইকেলটি উদ্ধার হয়নি’।

তেঘরিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আনু মিয়া বলেন, ‘মশাজান বাজারে সাইকেলটি রেখে প্রয়োজনীয় কাজ করি। একটু পরে এসে দেখি সাইকেলটি নেই। এ ব্যাপারে আমি সদর মডেল থানায় জিডি করেছি’।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ মাহবুবুর রহমান আউয়াল বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন এলাকায় সাইকেল চোর চক্রের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে। ধারণা হচ্ছে, চক্রটি একে অপরের সহযোগিতায় মোটর সাইকেল পাকিং এলাকায় পূর্বেই অবস্থান করে। যে কারনে খুবই সহজেই তারা সাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আমার সাইকেলটি চুরি হলে আমি থানায় জিডি করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশ সাইকেলটি উদ্ধার পারেনি’।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘মোটরসাইকেল চুরি রোধে তৎপর রয়েছে পুলিশ। সাইকেল চুরির ঘটনায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। চোরদের সনাক্ত করতে এবং সাইকেল উদ্ধারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি সাদা পোষাকে বিভিন্ন স্পটে টহল দিচ্ছে পুলিশ।’ সম্প্রতি শহরে সাইকেল চুরির ঘটনায় কতটা জিডি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ ইদানিং ৫/৭ টি সাইকেল চুরি হয়েছে। এর মধ্যে ২টি উদ্ধার করা হয়েছে’।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *