অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে বিতাড়িত কর্মকর্তা বাগেরহাটে বদলি

জাতীয়

 

শেখ রাসেল
বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি

অনিয়ম-দুর্নীতিতে আলোচিত হয়ে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা থেকে বিতাড়িত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তুহিন কান্তি ঘোষ এবার পদোন্নতি নিয়ে বাগেরহাট জেলায় উপ-পরিচালক হিসাবে বদলি পেয়েছেন। এতে করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা এবং তার বিরুদ্ধে আদালতে চলমান মামলার স্বাক্ষীরা চরম আতঙ্কে পড়েছেন। ফলে বর্তমানে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালনকারী উপ-পরিচালক বিকাশ কুমার দাসকে সুনামগঞ্জে বদলী করায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে বাগেরহাটের পরিবার-পরিকল্পনা স্বাস্থ্য সেবাখাত।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগের এক বদলি আদেশ আসার পর থেকে গোটা বাগেরহাটে বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের বাগেরহাটে কর্মরতরাই এ বদলী আদেশ শুনে চরম আতংকে পড়েছেন।

বিষয়টি জানার পর খোজ-খবর নিতে গেলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের বাগেরহাট অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের আদেশে নড়াইল জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্য্যলয়ের সহকারী পরিচালক তুহিন কান্তি ঘোষকে বাগেরহাটে উপ-পরিচালক হিসাবে বদলী করা হয়েছে। আর বাগেরহাটের উপ-পরিচালক বিকাশ কুমার দাসকে সুনামগঞ্জে বদলি করা হয়েছে। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এখানে কর্মরত একাধিক কর্মচারী বলছেন ২০০৭ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ফকিরহাট উপজেলায় পঃপঃ কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন কালে অধিনস্থ স্যাকমো এবং এফডবিউভিদের বিপদে ফেলে কৌশলে প্রতিনিয়ত অর্থ আদায় করতো। পিকনিক, টেলিভিশন ক্রয়সহ নানা অজুহাতে অধিনস্থদের নিকট থেকে চাঁদা আদায়সহ নারী কেলেংকারিতে জড়িয়ে পড়ে। উপায়ন্তর না পেয়ে দুর্নীতিবাজ ওই কর্মকর্তা তুহিন কান্তি ঘোষের বিরুদ্ধে গত ২০১১ সালের ১৬ মার্চ পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহা-পরিচালক বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এর পর ২০১৭ সালে অধিদফতর থেকে তুহিন কান্তি ঘোষকে খুলনার কয়রায় বদলী করা হয়। সেখানেও সে নারী কেলেংকারীতে জড়িয়ে পড়লে তাকে বরিশালে বদলী করা হয়। যদিও সে ওই আদেশ মানেন নাই। এদিকে ফকরহাটের ঘটনায় তদন্তকালে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারি ডাঃ শাহরিয়ার শামীমকে তুহিন কান্তি ঘোষ প্রকাশ্য জনস্মুখে হত্যার হুমকি দেয়। এবং ডাঃ শাহরিয়ার শামীমের বিরুদ্ধে কয়েকজনের জাল স্বাক্ষর দিয়ে অধিদফতরে অভিযোগ দেয়া তুষার কান্তি ঘোষ। যা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এ বিষয়ে ডাঃ শাহরিয়ার শামীম ফকিরহাট থানায় জিডি করেন। জিডির ঘটনায় তদন্ত হলে ঘটনার সত্যতা পেয়ে ফকিরহাট থানার তৎকালীন এসআই রফিকুল ইসলাম নন এফআইআর মামলা হিসাবে তুষার কান্তি ঘোষের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগের বাদী ডাঃ শাহরিয়ার শামীম এ প্রতিবেদককে বলেন তুষার কান্তি ঘোষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে আগামী ২৯ নভেম্বর বাগেরহাট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বাক্ষীর তারিখ রয়েছে। আর মামলা চলমান অবস্থায় তিনি বাগেরহাটে উপ-পরিচালক হয়ে বদলি হওয়ায় আমাদের জন্য অসুবিধা হবে। মামলার বিচার বিলম্বিত হতে পারে।মামলাটির আইনজীবি অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম সোমবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, ইতোমধ্যে চারজন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ হয়ে গেছে। বাদীর স্বাক্ষী বাকী আছে। অভিযোগ উঠেছে মামলা থেকে পরিত্রান পেতে তুষারকান্তি ঘোষ বড়ধরনের তদবীর করে নড়াইল জেলা থেকে বাগেরহাটে বদলি নিয়েছেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *