অবরোধ কর্মসূচিতে ঠিক কী কী হতে যাচ্ছে?

জাতীয়

(২৮ অক্টোবর) শনিবার বিএনপির সমাবেশে ”হামলা, হত্যা, গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে” এবং সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে ৩১ অক্টোবর, ১লা ও ২রা নভেম্বর তিন দিনের সর্বাত্নক অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে। রোববার দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ টানা তিন দিনের এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বিএনপি বলছে, গত পাঁচ দিনে সারা দেশে বিএনপি’র দুই হাজার ছয়শত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৪৫টি।

আর গেলো ২৮শে জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৪২টি। যেখানে গ্রেপ্তারের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে।

 

বিএনপি বলছে, তাদের ভাষায় এসব গ্রেপ্তার, নির্যাতনের অবসান এবং সরকার পতনের দাবি আদায়ের জন্যই তাদের অবরোধের নতুন কর্মসূচি।

প্রেস ব্রিফিংয়ে রিজভী জানান, অবরোধ পালিত হবে সারাদেশে সর্বাত্মকভাবে।
এর আওতায় থাকবে রেলপথ, রাজপথ এবং নৌপথ। তবে এর আওতা কি হরতালের মতোই হবে নাকি শুধু জাতীয় মহাসড়ক এবং রেল ও নৌ-বন্দর কেন্দ্রিক হবে তা স্পষ্ট নয়। ব্রিফিংয়েও এ বিষয়ে আর কিছু বলা হয়নি।

 

গণমাধ্যমকে রিজভী আহমেদ জানিয়েছেন, অবরোধ বলতে তারা সারা বাংলাদেশে সব ধরণের চলাচল বন্ধ করাকেই বুঝিয়েছেন।

তিনি বলেন, ”অবরোধ কর্মসূচি মানে সর্বাত্মক অবরোধ। রাস্তা-ঘাট, রেল, নৌ সব বন্ধ থাকবে। এমনকি শহরের ভেতরেও সব ধরণের চলাচল বন্ধ থাকবে। ”

এদিকে আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই বিএনপির কর্মসূচি মোকাবেলায় রাজপথে শান্তি সমাবেশ করে আসছে। বিএনপির মহাসমাবেশ এবং হরতালের কর্মসূচিতে সহিংসতার ঘটনার পর আওয়ামী লীগ একে বর্ণনা করেছে, তাদের ভাষায় ”রাষ্ট্রব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার দু:সাহস হিসেবে। ”

তবে রোববার সন্ধ্যায় যখন বিএনপি নতুন করে অবরোধের ডাক দিয়েছে, তখন আওয়ামী লীগ বলছে, অবরোধের কর্মসূচি ব্যর্থ হবে।

দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলছেন, বিএনপি হরতাল-অবরোধ যেটাই দিক, সেটা জনজীবনে কোন প্রভাব ফেলবে না। কারণ বিএনপি’র প্রতি জনসমর্থন নেই।

তিনি বলেন, ”অবরোধের তেমন কোন প্রভাব থাকবে না। হরতাল দিয়ে তারা আতংক সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু সেটা কাজে আসে নাই। মানুষের শংকা কেটে গেছে। অবরোধ দিয়ে সাধারণ মানুষকে আর আতংকিত করা যাবে না”।

অবরোধের অতীত অভিজ্ঞতা কী বলছে?

বিএনপির জন্য অবরোধ কর্মসূচি নতুন নয়। এর আগেও দলটি একটানা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। তবে সেটি এখন থেকে আট বছরেরও বেশি আগে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর ২০১৫ সালে ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধ পালন করে দলটি। সে সময় মূলত অবরোধের ঘোষণা দেয়ার পর এক পর্যায়ে এর সঙ্গে হরতালকেও যুক্ত করে দলটি।

ওই হরতাল-অবরোধ এক পর্যায়ে সহিংস রূপ নেয়। একের পর এক বাসে আগুন ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মতো ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সরকার এসব ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করলেও তারা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে উল্টো সরকারকেই এর জন্য দায়ী করে আসছে।

তখন একটানা হরতাল অবরোধ চলতে থাকলে এক পর্যায়ে এটি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। রাজপথেও অবরোধের সমর্থনে বিএনপি কিংবা বিশ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের আর দেখা যায়নি।

এক পর্যায়ে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নিজেরাই সেই কর্মসূচি স্থগিত করে। ২০১৫ সালের এপ্রিলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া হরতাল-অবরোধ যুগপৎ কর্মসূচির অবসান ঘটান। এর মাধ্যমেই বিএনপি’র অবরোধ কর্মসূচি শেষ হয়। এরপর দলটি আর অবরোধের কর্মসূচিতে যায়নি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *