অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টেস্ট বানিজ্যে শীর্ষে চিকিৎসক শোভন

জাতীয়

কাজী মোহাম্মদ আলীঃ

যশোরের অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের টেস্ট বানিজ্যের শিকার হচ্ছে
সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। ভিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের পাশাপাশি
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরাও এখন প্রকাশ্যে নেমেছে টেস্ট বানিজ্যে।বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে একাধিক বার সংবাদ প্রকাশ হলেও এযাবত টেস্ট বানিজ্যের বিষয়ে নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। অভিযোগ আছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উর্ধতন কর্মকর্তারাও জরিত এই বাণিজ্যের সাথে। তাদের দিক নির্দেশনা মতোই প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে চিকিৎসকরা সেবা নিতে আসা রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট লেখেন এবং সেটা নিদিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে করতে বলা হয়। এতোদিন একাজ গুলো বিভিন্ন ডায়াগনস্টিকের দালালরা করলেও বর্তমানে এ কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করছে কিছু চিকিৎসকরা। চিকিৎসকের লেখা অধিকাংশ টেস্ট হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে করার সুযোগ থাকলেও চড়ামূল্যে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এসব টেস্ট করতে রোগীদের বাধ্য করা হচ্ছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন একাধিক চিকিৎসক রয়েছে যারা সরাসরি বিভিন্ন ডায়াগনস্টিকের সাথে সংপৃক্ত। অনেক চিকিৎসক ডায়াগনস্টিকের সাথে সংপৃক্ত নয়, তবে তারা চুক্তিবদ্ধ। চুক্তিবদ্ধ চিকিৎসকরা
টেস্ট লেখার পর টেস্টের টাকার ৪০ – ৬০ % পায় ঘরে বসে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে বাণিজ্যিক ভবনে পরিনত করা চিকিৎসকদের মধ্যে অন্যতম একজন চিকিৎসক শোভন বিশ্বাস। তার কাছে সেবা নিতে গেলেই সেবার পরিবর্তে পাওয়া যায় একাধিক টেস্ট। যে টেস্টের অধিকাংশ রোগের সাথে সংপৃক্ত না। আবার টেস্ট দেবার পর সেটা কোথা থেকে করাতে হবে সে নির্দেশনাও দিয়ে দেন তিনি। গত ২ ফেব্রুয়ারী সেবা নিতে আসা এক বছর বয়সি সোয়াইবের পিতা জানান, আমার ছেলের ডাইরিয়ার হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। দুইদিন যাবত ভর্তি থাকা অবস্থায় , এক এক জন ডাক্তার এসেছে আর শুধু পরীক্ষা দিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে তা করাতেও হয়েছে। ডাক্তার শোভন বিশ্বাস এসে এ.এস.ও টাইটার,সি.বি. সি, বুকের এক্সরে টেস্ট লিখে সেটা একটি নিদিষ্ট ডায়াগনস্টিক থেকে করাতে বলে। সেই ডায়াগনস্টিকে গেলে টেস্ট করাতে আমার কাছে ৩৮৫০ টাকা চায়। আমার কাছে টাকা না থাকায় আমি টেস্ট না করিয়ে ফিরে আসি। পরে এবিষয়ে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কে জানালে তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পরে আমার বচ্চাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে চলে আসি। সরকারি হাসপাতালে মানুষ আসে স্বল্প খরচে চিকিৎসা জন্য। আর এখানে স্বল্প খরচ তো দুরের কথা জমি- যাইগা বেঁচে টাকা নিয়ে আসলে ডাক্তারদের ভাল হয়।
গত বৃহস্পতিবার বহির্বিভাগে ঠান্ডা জরিত সমস্যা নিয়ে সেবা নিতে আসে এক শিশু, তাকে সেবা না দিয়ে দেওয়া হয় ৩ টি টেস্ট। শংকরপাসা রঘুনাথপুর গ্রামের সিবাসীস বিশ্বাসের স্ত্রী ও শিশুর মাতা নুপুর জানান,
শিশুর কাশি হওয়ায় তিনি হাসপাতালে স্বল্প খরচে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। কিন্তু ওই চিকিৎসক শোভন তাদের তিনটি টেস্ট দিয়ে লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে বলে। যার একটি টেস্ট করাতে ১৮৫০ টাকা চেয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
এসময় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন , হাসপাতালে গেছি কম টাকায় চিকিৎসা করাতে কিন্তু ডাক্তার টেস্ট লিখে সেটা বাইরে থেকে করাতে বলেছে। শুনছি সরকারি হাসপাতালে কম টাকায় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় তাহলে আমাদের বাইরে পাঠালো কেন? আমাদের কাছে টাকা না থাকায় টেস্ট করাতে পারিনি। আমরা গরিব মানুষ ফ্রি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছিলাম। এখন দেখছি বাইরের চাইচে এখানে খরচ বেশী। এছাড়াও চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসক শোভনের প্রথম চিকিৎসা টেস্ট। তিনি ওষুধ লেখার আগে একাধিক টেস্ট লেখেন। আবার তার বলা ডায়াগনস্টিক থেকে টেস্ট না করালে তিনি তা দেখেনা। অনেকে অভিযোগ করে বলেন তার বাড়ি পার্শ্ববর্তী মনিরামপুর উপজেলার ভুলবাড়িয়া গ্রামে তবে সে দীর্ঘদিন অভয়নগরের শেষ ও মনিরামপুর উপজেলার শুরু মশিয়াহাটী বাজারে বসবাস করায় স্থানীয় ক্ষমতাশীল দলের বিভিন্ন নেতার সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। সে এই সুসম্পর্ক কাজে লাগিয়ে রোগী সহ কর্মক্ষেত্রে দাপট দেখান।
টেস্ট দেওয়ার বিষয়ে চিকিৎসক শোভনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে বলেন, কোন কিছু জানার থাকলে টিএসওর কাছে যান। আমার কোন বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া নিষেধ আছে। চিকিৎসা দিয়েছেন আপনি আর বক্তব্য টিএসওর কাছ থেকে নেব কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলেন টিএসওর রুমে যা বলার সেখানেই বলব। পরে টিএসওর রুমে গিয়ে তাকে পাওয়া না গেলে সে হাসপাতালের অপর এক চিকিৎসক ও লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অঘোষিত পরিচালক ডাঃ আলিমুর রাজিবের রুমে নিয়ে যায়। সেখানেও সে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসকে অবহিত করলে তিনি জানান, চিকিৎসার ক্ষেত্রে টেস্টের প্রয়োজন আছে। তবে যদি কোন চিকিৎসক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অপ্রয়োজনে টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে তা অনৈতিক। সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরীরত অবস্থায় কোন চিকিৎসক প্রাঃ ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করতে পারবেনা। যদি কেউ এটি করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *