অভিভাবকহীন নেতৃত্ব, দিকশূন্য বিএনপি

রাজনীতি

চেয়ারপারসন অন্তরীণ, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ফেরারি হয়ে দেশান্তরী। মহাসচিব কারাগারে, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং মুখপাত্র আছেন অন্তরীন। এমনই নেতৃত্ব শূণ্যতায় দেশের বৃহৎ বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরাম সালেহ প্রিন্সকে।

দলের এই নেতৃত্বহীনতায় অনেকটা দিকশূন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা। যদিও নেতারা বলছেন, সাময়িক কিছু অসুবিধা হলেও নীতি নির্ধারণে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

নেতারা বলছেন, বিএনপিকে নেতৃত্বশূণ্য করতে সরকার ১৩ বছর যাবত চেষ্টা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারকে নিঃচিহ্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছে সরকার। অতীতেও পারেনি, আগামীতেও পারবে না।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হোন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও তিনটি মামলায় ৭ বছর, ১০ বছর এবং একটিতে যাবজ্জীবন সাজা দেয় আদালত। ফেরারী থাকা সত্বেও সুদূর লন্ডন থেকে দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের সমন্বয়ে দলকে পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু গত ৭ ডিসেম্বর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং ৯ ডিসেম্বর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেপ্তার হলে কর্মসূচি সমন্বয় করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, দলের সিনিয়র নেতারা গ্রেপ্তার হলে নেতাকর্মীদের মনোবল যাতে শক্ত থাকে তার জন্য তৃণমূলের নেতাদের সাথে সরাসরি কথা বলছেন তারেক রহমান। এমনকি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারীদের এক প্লাটফর্মে এনে প্রতিষ্ঠা করেন বিএনপি। জিয়াউর রহমান নিহত হলে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হোন বেগম খালেদা জিয়া। ৮৪ সালের ১০ মে দলটির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হোন তিনি।

এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দলকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আনাসহ রাজনীতিতে বিএনপির শক্ত অবস্থান জানান দেয়া ছিলো বেগম জিয়ার জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। চারদশকে বেশ কয়েকবার ক্ষমতায় আসা, বিরোধীদলে থাকা এবং সংসদের বাইরে থাকার অভিজ্ঞতাও রয়েছে দলটির। এছাড়া জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বিএনপিতে জিয়া পরিবারের নেতৃত্বই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর রাজনীতিতে টিকে থাকা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ায় জিয়া পরিবারের। একের পর এক মামলার খোড়াগ পিছু ছাড়েনি তাদের। গত ২ নভেম্বর একটি মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয় তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধেও।

নেতৃত্বহীন বিএনপি এবং দিকশূন্য রাজনীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অস্বীকার করার কিছু নেই যে, মহাসচিবসহ যেসকল সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা দলের জন্য অপরিহার্য। বেছে বেছে সেই সকল নেতাদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদেরকে দূর্বল করার জন্য। তবে, আমরা থাকলাম কি থাকলাম না এতে কিছু আসে যায় না দেশের জনগণ আমাদের সাথে আছে।

তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বরের গণ সমাবেশ নসাৎ করতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু জনস্রোত কি ঠেকাতে পেরেছে? নেতৃত্ব শূন্য হলেও বিএনপি দুর্বল হবে না। বিএনপি দিকশূন্য নয়। সরকার এরআগেও বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা করেছে, পারেনি। বরং এগুলো করতে গিয়ে আওয়ামী লীগও দিকশূন্য হয়ে পড়েছে।

বিএনপির ভাইস শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের সাথে কারো তুলনা হয় না। হয়ত তিনি দেশে নেই। কিন্তু সোসাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের কারণে তিনি নিয়মিত আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন, দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তবে, মহাসচিবসহ যেসকল নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মত করে কাজ করার মত লোক নেই। তারপর যারা যুগ্ম মহাসচিব আছেন তারা বিদ্যমান। তাছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টারা আছেন। তাই গনতান্ত্রিক কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, সরকার মনে করেছে তাদের গ্রেপ্তার করলে দলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে। কিন্তু আমরা এখন আরো বেশি ঐক্যজোট। যার প্রমাণ গোলাপবাগের জনসভা। এত গ্রেপ্তার, বাঁধা সত্বেও জনগণ জানান দিয়েছে এ সরকারকে মানুষ আর চায় না। কার্যত বিএনপিতে কোনো সংকট নেই।

বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, এ সরকার এতটাই ফ্যাসিবাদী যে, গত ১৫ বছর যাবৎ বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য এমন কিছু নাই যে করে নাই। নেতৃত্ব শূন্য করতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হাস্যকর মামলা দিয়ে সাজা দিয়েছে। নেতৃত্বহীন করার অনেক চেষ্টা করেছে। এগুলো আমরা অভ্যস্ত। হতাশ থাকার কথা থাকলেও আমরা হতাশ নই। আমাদের বিরুদ্ধে যত অত্যাচার হচ্ছে, অবিচার হচ্ছে আমরা ততবেশি শক্তিশালী হচ্ছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *