এই টেস্ট আয়ারল্যান্ডের জন্য রোমাঞ্চের, লড়াইয়ের, ঘুরে দাঁড়ানোর কিংবা আত্মবিশ্বাসেরও। বাংলাদেশের জন্য? একটা সময় হয়ে গিয়েছিল রীতিমতো মান বাঁচানোর লড়াই।
চার বছরের লম্বা অপেক্ষা, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কাঠামো নেই, বেশিরভাগ ক্রিকেটারের নেই সাদা পোশাক জড়ানোর অভিজ্ঞতাও- এমন একটা দল যেভাবে লড়াই করলো, তাদের সাধুবাদ না দিয়ে উপায় নেই একদমই।
বাংলাদেশ বিপরীতে বোধ হয় হাফ ছেড়ে বাঁচার স্বস্তিতেই। সব টেস্ট দলের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ হারের যে অভিশাপ- আয়ারল্যান্ডের নাম তাতে উঠেনি। আইরিশদের বুক চিতিয়ে লড়াইয়ের পর বাংলাদেশ উতরে গেছে শেষ অবধি। মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের একমাত্র টেস্টে আয়ারল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
টেস্টের শুরুটা হয়েছিল অনভিজ্ঞতার বিরুদ্ধে শক্তির লড়াইয়ে। ৬ জনের অভিষেকের পর প্রথম ইনিংসে আইরিশরা রান করতে পারেনি সেভাবে। এরপর বাংলাদেশের হয়ে সেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর রহিম। রানও কম উঠেনি, কিন্তু যথেষ্ট উঠেছে কি না সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে ম্যাচশেষে। দ্বিতীয় ইনিংসে আয়ারল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নেমে ২৭ রানের চার উইকেট হারিয়েছিল বটে, কিন্তু পরের লড়াইটা মনে রেখে তারা সাহসই পেতে পারেন ভবিষ্যতের জন্য।
আইরিশদের হয়ে দ্বিতীয় টেস্ট ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন লরকান টাকার। ব্যাট হাতে ম্যাকব্রাইন, হ্যারি টেক্টররাও করেছেন মনে রাখার মতো কিছুই। শেষ অবধি তারা অবশ্য জয়ের দেখা পায়নি। কিন্তু লম্বা সময়ের আত্মবিশ্বাস পুঁজি হয়েছে তাদের।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২১৪ রানে অলআউট হয় আইরিশরা, জবাবে ৩৬৯ রান করে স্বাগতিকরা। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীরা ২৯২ রান করলে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩৮ রান। সেটি তারা করতে অবশ্য খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি সাকিব আল হাসানদের।
৮ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করে আয়ারল্যান্ড। আগের দিন লরকান টাকারের সেঞ্চুরি ও টেক্টর-ম্যাকব্রাইনের ব্যাটিং তাদের আশাটা করেছিল বেশ বড়। পুরোদিনে ৪ উইকেট হারিয়ে তারা করেছিল ২৫৯ রান। শেষদিনে ৪০-৫০ রান করলে জয়ের স্বপ্নটা বেশ ভালোভাবেই দেখতে পারতো তারা।
সেটি থামাতে বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা তাইজুল আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে করান সাকিব আল হাসান। তাদের দুই ওভার করিয়ে নিয়ে আসেন পেসার এবাদত হোসেনকে।
দ্বিতীয় বলেই তিনি এনে দেন সাফল্যও। এবাদত ভাঙেন গলার কাঁটা হয়ে থাকা ম্যাকব্রাইনের উইকেট। ১৫৬ বল খেলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৭২ রান করে আউট হন তিনি। এরপর আইরিশদের জন্য অলআউট হওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার কেবল।
তাদের শেষ উইকেটটিও নেন এবাদত হোসেন। তার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আরেক অপরাজিত ব্যাটার গ্রাহাম হিউম। ২ চারে ৫৫ বলে ১৪ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। তৃতীয় দিনে এসে কেবল ৬ রান যোগ করে আইরিশরা।
১৩৮ রান তাড়া করতে নেমে তামিম ইকবালের উদ্বোধনী সঙ্গী হন লিটন, টেস্টে সচরাচর দেখা যায় না এমন। আক্রমণাত্মক শুরু করেন তারা। মার্ক অ্যাডায়ারের বলে অদ্ভূতভাবে বোল্ড হন লিটন। তার হেলমেটে বল লেগে কনুই থেকে ব্যাট হয়ে চলে যায় স্টাম্পে। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ১৯ বলে ২৩ রান করে আউট হন লিটন।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরেছেন সাজঘরে। ৯ বলে ৪ রান করে ম্যাকব্রাইনের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। তার বিদায়ের পর দলকে টেনে নেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও তামিম। তাদের দুজনের জুটিতে আসে ৬২ রান। ৩ চারে ৬৫ বলে ৩১ রান করে তামিম অবশ্য আউট হন বেন হোয়াইটের বলে।
কিন্তু আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক এবার ফিফটি করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। ৭ চারে ৪৮ বলে ৫১ রান করেন তিনি। ২২ বলে ২০ রান করে অপরাজিত থাকেন মুমিনুল হক।
শেয়ার করুন