লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ( আমি হাজির হে আল্লাহ, আমি হাজির আপনার ডাকে সাড়া দিতে…)। আজ সৌদি আরবের স্থানীয় সময় ৯ জিলহজ্জ পবিত্র হজের দিন। এদিন ফজরের পর থেকেই মিনায় অবস্থানরত আল্লাহর মেহমানরা তালবিয়া পাঠ করতে করতে ছুটে যান আরাফাহ’র মাঠের দিকে। যেখানেই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতায় সারদিন পার করবেন তারা।
সৌদি হজ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে এ বছর সারা বিশ্ব থেকে ১৪ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি বিদেশী হাজীর পাশাপাশি কয়েক লাখ দেশীয় হাজী হজ পালন করছেন। এর মধ্যে পবিত্র দুই মসজিদের খাদেম সৌদি বাদশাহ সালমানের অতিথি হিসেবে ফিলিস্তিনসহ ১০০ দেশের ২ হাজার ৪৪৩ জন হাজীও হজ পালন করতে এসেছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ জিলহজ) হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হলেও এর আগেই বুধবার ভোর থেকেই গ্র্যান্ড মসজিদ থেকে সাত কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত তাঁবুর শহর মিনায় পৌঁছাতে শুরু করেন হজ করতে আসা হাজীরা। সৌদি কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন দেশের হজ মিশনের সুষ্টু ব্যবস্থাপনার ফলে হজযাত্রীরা তাঁবুর শহর মিনায় তাদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত সম্পন্ন করতে সক্ষম হন।
হজের তিনটি ফরজের একটি হচ্ছে আরাফাত ময়দানে অবস্থান। আর এটি মূল আনুষ্ঠানিকতাও। এই পবিত্র প্রান্তরেই দশম হিজরীতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। এ বছর আরাফাহর মসজিদে নামিরা থেকে স্থানীয় সময় বেলা ১২টা ১০ মিনিটের সময় হজের খুতবা দেবেন সৌদি আরবের শুরা কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান, উম্মুল-কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদের সাবেক ডিন, মসজিদুল হারামের প্রবীণ ইমাম ও খতিব ফাদিলাতুশ শায়েখ সালেহ বিন হুমাইদ।
আরবীতে প্রধান করা খুতবা অন্যবছরের ন্যায় এবছরও বাংলা, উর্দু, ইংরেজি, ফরাসি, ইন্দোনেশিয়ান, ফার্সি, হাউসা, হিন্দি, ডাচ, থাই, মালায়ালাম, ম্যান্ডারিন, রুশ, বাংলা, তুর্কি, বাহাসা মালায়, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, ইতালীয়, জার্মান, ফিলিপিনো (তাগালোগ), আমহারিক (ইথিওপিয়া), বসনিয়ান, সোয়াহিলি, পশতু, তামিল, আজারবাইজানি, সুইডিশ, উজবেক, আলবেনিয়ান, ফুলানি (ফুলা), সোমালি, রোহিঙ্গা ও ইওরুবা ভাষায় অনুবাদ করা হবে। এরমধ্যে বাংলায় বাংলা অনুবাদক ও লাইভ ভাষ্যকার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের মুহাম্মদ খলিলুর রহমান মাক্কি।
হাজীরা আরাফাহ ময়দানে খুতবা ও নামাজের মধ্য দিয়ে এখানে সারা দিন পার করবেন। হাজিরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে আল্লাহর জিকির-আসকার ও প্রার্থনায় মগ্ন থাকবেন। হাজিরা এখানে জোহর ও আসর নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন।
পরে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন। মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সারা রাত সেখানেই অবস্থান করবেন। মিনায় জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে পুনরায় মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। ১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর জামারায় পাথর নিক্ষেপ, পশু কোরবানি, মাথা মুন্ডনসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করবেন হাজীরা।
হজযাত্রীদের হজের ইহরাম অবস্থায় প্রবেশের সময় থেকে কুরবানীর দিন, ১০ই যিলহজ্জ জামারাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপ শুরু না করা পর্যন্ত ঘন ঘন তালবিয়া পাঠ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর ধর্মীয় বিষয়ক প্রশাসনের প্রধান শেখ আব্দুর রহমান আল-সুদাইস।
এদিকে চলতি বছরে সৌদিআরবে প্রচন্ড গরম থাকায় হজযাত্রীদের তাপজনিত অসুস্থতা প্রতিরোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি হজযাত্রীদের ছাতা ব্যবহার, পানি পান করা, হালকা রংয়ের কাপড় পরিধান এবং প্রয়োজন ছাড়া তাঁবুর বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
সৌদি আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুসারে আজ মক্কা ও আশপাশের অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। গতকাল আরাফাহ ময়দান এলাকার তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।