রাজনীতি কোন সাধারণ বিষয় নয়।প্রচুর পড়াশুনা,গণমানুষের সাথে মিশে তাদের মনের খবর বের করে আনার কৌশল যা সাধনার মাধ্যমে আয়ত্ম করতে হয়।এটি ধর্মীয় গ্রন্থের ন্যায় পবিত্রতম এবং অসংখ্য আদর্শিক ব্রত।
রাজনীতি দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদনের সর্বোত্তম পন্থা। এই দর্শন যদি সঠিকভাবে অন্তরে ধারণ করা যায় তাহলে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিবেদন করা সহজ ও সুন্দর হয় এবং আমৃত্যু মানুষের হৃদয়ের মনি কোঠায় জায়গা করে নেওয়া সম্ভব হয়।বাংলাদেশের রাজনীতির হিসাবে বঙ্গবন্ধুসহ চার নেতার মৃত্যুর পর যে সকল রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সম্পন্ন ব্যক্তি সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন অন্যতম।তিনি ছিলেন শুদ্ধতম রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ ও জননেতা।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫২ সালের ১লা জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বাংলাদেশের মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। আশরাফুল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্য তিন জাতীয় নেতার সাথে আশরাফুলের পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছিল। পিতার মৃত্যুর পর সৈয়দ আশরাফুল যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং সে সময় তিনি লন্ডনস্থ যুবলীগের সদস্য ছিলেন।
১৯৯৬ সালে আশরাফুল দেশে ফিরে এসে ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ২০০১ সালে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। যখন আব্দুল জলিল গ্রেপ্তার হন, তখন সৈয়দ আশরাফুল আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।তিনি কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে সপ্তম ও অষ্টম, কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। এর পূর্বে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর স্ত্রী শিলা ঠাকুর মারা যাওয়ার পর তিনি প্রায়ই অসুস্থ হন।তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। নভেম্বর ২০১৮ সালে তার ফুসফুসের ক্যান্সার ৪র্থ ধাপে পৌঁছে ২০১৯ সালের ৩রা জানুয়ারি থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
সৈয়দ আশরাফের অকাল মৃত্যুতে বৈশ্বিক এবং বাংলার সমসাময়িক রাজনীতিতে কতোটা অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হলো তা ইতিহাসই নির্ধারন করে দিবে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ক্ষণজন্মা এই মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অনাদিকাল তাঁর কর্ম, শাণিত চেতনা, আদর্শিক দৃঢ়তা, নিষ্ঠা ও সততার জন্য অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।
স্বীকৃতি বিশ্বাস
স্টাফ রিপোর্টারঃ