আবাসিক হল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

জাতীয়

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) আনুমানিক ভোর ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলের ৭ম তলা থেকে মরদেহ উদ্ধার করেন তার সহপাঠীরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হল থেকে এক ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ রোববার (১৫ ডিসেম্বর) আনুমানিক ভোর ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলের ৭ম তলার ৭০০৫ নম্বর কক্ষ থেকে মরদেহ উদ্ধার করেন তার সহপাঠীরা।

আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর নাম তাকিয়া তাসনিম বিভা (১৯)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রথম বর্ষের (২০৩-২০২৪ সেশন) শিক্ষার্থী এবং বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলের আবাসিক ছাত্রী ছিলেন। তাকিয়া মাগুরা সদর উপজেলার পারান্দুয়ালী এলাকার ব্যবসায়ী আরিফ হোসেনর মেয়ে।

তার সহপাঠী ও হল প্রভোস্টের সূত্রে জানা যায়, তাকিয়া হলে অনিয়মিত ছিলেন। তিনি সাভারে তার মামার বাসায় থেকে ক্লাস করতেন। তবে গতরাতে (১৪ ডিসেম্বর) তিনি হলে আসেন। তার অন্য রুমমেটরা হলে না থাকায় তিনি একাই ছিলেন রুমে।

তার মোবাইল ফোনে দেখা যায়, আত্মহত্যার আগে তিনি ১ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট ভিডিও কলে কথা বলেছেন। সহপাঠীদের কাছ থেকে জানা যায়, ভিডিও কলে অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি তাকিয়ার প্রেমিক সাব্বির।

সহপাঠীরা আরও জানান, ভিডিও কলে তাদের দুজনের মাঝে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে তাকিয়া তার প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখেই সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তার সাব্বির মেয়েটির সহপাঠীদেরকে বিষয়টি অবগত করেন এবং মেয়েটিকে বাঁচাতে বলেন। সহপাঠীরা তাকিয়ার রুমের সামনে আসলে দরজা বন্ধ দেখতে পান। পরে এ ঘটনা তারা হল প্রভোস্টকে জানান।

এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে রুমে প্রবেশ করে তাকিয়াকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান সহপাঠীরা। পরে তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী শিউলি আক্তার বলেন, “ভোর ৪ টা ৪৬ মিনিটে একটি নম্বর থেকে আমার নম্বরে কল আসে। অপর পাশ থেকে একটা ছেলে বলে, তুমি কি তাকিয়ার পাশের রুমের? আমি বলি, আমার থেকে একটু দূরে ওর রুম। সে বলে  দ্রুত তাকিয়ার রুমে যাও ও সুইসাইড করতে পারে। পরে আমি দৌড়ে তাকিয়ার রুমে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করি। এরপর আরও কয়েকজন জড়ো হন। পরে দরজা ভেঙে দেখি সে ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। পরে কয়েকজন ধরে তাকে বিছানায় নামানো হয়।”

নিহত তাকিয়ার স্থানীয় অভিভাবক মামা মনির হোসেন বলেন, “ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমার ফোনে হল থেকে একটা কল আসে। এরপর আমাকে বলা হয় তাকিয়া আত্মহত্যা করেছে। পরে আমি সাভার থেকে ঘটনাস্থলে যাই এবং দেখি যে, তাকে ওড়না কেটে খাটের ওপর নামানো হয়েছে।”

এ বিষয়ে বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আবেদা সুলতানা বলেন, “আমি গতরাতে প্রায় ১০টা পর্যন্ত হলে ছিলাম। আনুমানিক ভোর ৫টার দিকে আমার কাছে এই তথ্য দেয় মেয়েরা। আমি তাদেরকে মেয়েটিকে উদ্ধার করতে বলি এবং হল সুপারকে বিষয়টি অবগত করি। সেই সাথে মেডিকেল সেন্টারে ফোন দিয়ে ডাক্তারকে সেখানে যেতে বলি। মেয়েরা প্রথমে দরজা ভাঙতে ভয় পাচ্ছিল। এক পর্যায়ে কিছু সাহসী মেয়ে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে। মেডিকেলে নেওয়া হলে তাকিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তার।”

তিনি আরও বলেন, “এটি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু। তার রুমে কিছু ডায়েরি ও মোবাইলসহ কিছু জিনিস পত্র পাওয়া গেছে। পুলিশ সেগুলো দেখছে। সেখানে হয়তো কিছু থাকতে পারে।”

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মাসুদ বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে নিহত শিক্ষার্থীর তথ্য নিয়েছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষী ও তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। নিহতের পরিবার এবং হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তার ময়নাতদন্ত করা হবে। তারা অনুমতি না দিলে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *