আমদানি শুল্ক কমিয়েও লাগামহীন আলুর দাম

অর্থনীতি ও বানিজ্য

বাজারে আলুর দাম আকাশ ছুঁয়ে চলেছে। গত দুই সপ্তাহে পণ্যটির দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা, যা এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। অথচ দুই মাস আগে সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়েছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যে, কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং দাম আরও বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন—বর্তমানে হিমাগারে থাকা আলু প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। পাইকাররা চাহিদা অনুযায়ী আলু পাচ্ছেন না। এর সাথে, অক্টোবর মাসে অতিবৃষ্টির কারণে আলুবীজ রোপণে দেরি হওয়ায় বাজারে আগাম আলু আসতে দেরি হচ্ছে। ফলে, সরবরাহ কমেছে এবং দাম বেড়েছে।

আলু সাধারণ তাপমাত্রায় বেশিদিন ভালো থাকে না, তাই হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। সাধারণত নভেম্বরের প্রথম দিকে নতুন আলু বাজারে আসতে শুরু করে, এবং ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে এবার সরবরাহ কমে গেছে এবং দাম বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় আলুর দাম অনেক বেশি।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী— গত বছর এই সময়ে আলুর দাম ছিল ৪৫-৫০ টাকা, কিন্তু এখন তা ৬৫-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক বছরে দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। গত বছরও দাম ৮০ টাকা হয়েছিল, তবে সেটা ডিসেম্বরের শেষে।

জুনে আলু ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও, এখন তা ৬২ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। দাম বাড়ানোর পুরো সুবিধা মজুতদাররা নিচ্ছেন। গত বছর যেখানে প্রশাসনিক তদারকি ছিল, এ বছর তেমন কিছু নেই।

ব্যবসায়ীরা জানান, অক্টোবর মাসে অতিবৃষ্টির কারণে আলুবীজ রোপণে দেরি হয়েছে। এর ফলে আগাম আলু বাজারে আসছে না, এবং সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়া, কৃষকেরা আগামী বছর বেশি জমিতে আলু চাষ করতে চান, তবে বীজ আলুর সংকট দেখা দিয়েছে। তারা খাবারের আলুও বীজ হিসেবে ব্যবহার করছেন, যার ফলে দাম বাড়ছে।

আলু উৎপাদনের তথ্যেও গরমিল রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে— দেশে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন, তবে হিমাগার মালিকদের দাবি, উৎপাদন হয়েছে ৭০-৭৫ লাখ টন। অর্থাৎ ১০-১৫ লাখ টন আলুর ঘাটতি রয়েছে।

এদিকে, গত সেপ্টেম্বরে আলুর আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়। এর পরেও বাজারে দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। ভারত থেকে ২৪ অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ হাজার টনের বেশি আলু আমদানি হয়েছে, তবে দাম কমাতে এর প্রভাব পড়েনি।

হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানান, জুনে আলু ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও, এখন তা ৬২ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি অভিযোগ করেন, দাম বাড়ানোর পুরো সুবিধা মজুতদাররা নিচ্ছেন। গত বছর যেখানে প্রশাসনিক তদারকি ছিল, এ বছর তেমন কিছু নেই।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *