‘আরিফের কৌশলে’ বিএনপির সমাবেশের আগে সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট নয়

সিলেট

দেশের অন্য সব বিভাগে বিএনপির গণসমাবেশের আগে পরিবহণ ধর্মঘট করা হলেও সিলেটে তা হচ্ছে না।

সিলেট বিএনপির ‘মুশকিল আসান’ হিসাবে পরিচিত সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কৌশলে গণসমাবেশের আগে সিলেট মূলত পরিবহণ ধর্মঘটমুক্ত থাকছে। বিএনপির গণসমাবেশের দুদিন আগে ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে তিনি পরিবহণ ধর্মঘট বন্ধ করে দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুরসহ বিএনপির বিভিন্ন গণসমাবেশের দুদিন আগে পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক সংগঠন স্থানীয়ভাবে পরিবহণ ধর্মঘট পালন করেছে। কিন্তু সিলেটে পরিবহণ ধর্মঘট হচ্ছে না। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতির কারণে সিলেটে গণসমাবেশের আগে পরিবহণ ধর্মঘটে যাচ্ছে না পরিবহণ সংগঠনগুলো। গণসমাবেশের আগে পরিবহণ ধর্মঘট রুখতে মেয়র আরিফ কৌশল অবলম্বন করেছেন। কৌশলে একটি ইসলামী সংগঠনকে তিনি ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছেন। সিলেট শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে সিটি করপোরেশনের ট্রাক টার্মিনালে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের একটি অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠনের ব্যানারে দুদিনব্যাপী ইজতেমার আয়োজনের ব্যবস্থা করেছেন মেয়র আরিফ। বিএনপির গণসমাবেশের দুদিন আগে ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছে। ফলে গণসমাবেশের দুদিন আগে পরিবহণ ধর্মঘট ডাকতে ঢাকা থেকে স্থানীয় পরিবহণ নেতাদের চাপ দিলেও তারা ইজতেমা থাকার কথা বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার রাতে ইজতেমা পেছানোর জন্য মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে আয়োহকদের অনুরোধ করা হলেও তাতে সম্মত হননি তারা। আমীরে হেফাজত আল্লামা মুফতি মুহা. রশীদুর রহমান ফারুক, পীর ছাহেব বরুনা যথাসময়ে ইজতেমা করার ঘোষণা দিয়েছেন। মুহা. রশীদুর রহমান ফারুকের সাথে আরিফুল হক চৌধুরীর ঘণিষ্টতা রয়েছে। এই আলেমকে পীর হিসেবে মানেন সিলেট সিটি মেয়র। মেয়রের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও মুহা. রশীদুর রহমান ফারুককে ধর্মগুরু হিসেবে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। তার ঘোষণার ফলে শুক্র শনিবার সিলেটের কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালে ইজতেমা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানা গেছে, ইজতেমায় বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে বিএনপির নেতাকর্মীরা যোগদানের কথা বলে সিলেট এসে গণসমাবেশে যোগ দেবেন। বিষয়টি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাও অবগত। ১১ ও ১২ নভেম্বর নগরীর সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম দুদিনব্যাপী ইজতেমা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু সিটি মেয়র আরিফের পরামর্শে ইজতেমা এক সপ্তাহ পিছিয়ে ১৭ ও ১৮ নভেম্বর করা হয় এবং স্থানও পরিবর্তন করা হয়। বিএনপির গণসমাবেশের দুদিন আগে ইজতেমা নিয়ে যাওয়া হয়। দক্ষিণসুরমা উপজেলার পারাইরচকে সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালে আয়োজিত ইজতেমায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে বলে আয়োজকরা আশা করছেন। এতে দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত আলেমরা রয়ান করবেন।

ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগানো মেয়র আরিফের এমন কৌশলে বিএনপির গণসমাবেশ সুবিধা পেলেও ৭৭ বছরের পুরোনো সংগঠন আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন সংগঠনের একাধিক কর্মী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, ১৯৪৪ সালে উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ শায়খুল ইসলাম আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী (রাহ.) হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম’ কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের ফায়দা লোটার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়নি। এবার যা হচ্ছে খুবই দুঃখজনক বলে তিনি অভিহিত করেন। ভেন্যু নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জানান, শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ট্রাক টার্মিনালে ট্রাকই যেতে চায় না সেখানে ইজতেমার আয়োজনের উপযুক্ত স্থান নয়।

ইজতেমায় আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী, ভারতের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন মাওলানা সায়্যিদ মাহমুদ মাদানী ও মাওলানা সাইয়্যিদ আশহাদ রশীদিসহ দেশ বরেণ্য আলেমরা বয়ান করবেন।

তবে বিএনপির গণসমাবেশের সঙ্গে ইজতেমা আয়োজনের কোনো যোগসূত্র নেই বলে দাবি করেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা শাব্বীর আহমদ ফতেহপুরী। তার দাবি আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয় এবং কারও হাতিয়ার হিসাবেও ব্যবহার হচ্ছে না।

আগামী ১৯ নভেম্বর সিলেটে গণসমাবেশ করবে বিএনপি। জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, গণসমাবেশের ৭০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। সমাবেশে আসা দলীয় নেতাকর্মীদের আবাসনের জন্য নগরীর ২৫টি কমিউনিটি সেন্টার বুকিং করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির এক নেতা জানান, ১৮ নভেম্বর রাতের জন্য নগরীর ২৫টি কমিউনিটি সেন্টার বুকিং দেওয়া হয়েছে। সেখানেই কর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। এছাড়া নগরের খোলা মাঠগুলোতেও কর্মী-সমর্থকদের রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বিএনপির সমাবেশের আগে সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট হবে না জানিয়ে সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটে ধর্মঘটের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা বিএনপির গণসমাবেশের সময়ও গাড়ি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করার পক্ষে। শ্রমিকরা কোন রাজনৈতিক দলের নয়।’

সোমবার দুপুরে সিলেটের সমাবেশস্থল আলীয় মাদ্রাসা মাঠ পরিদর্শন করেন বিএনপি নেতারা। এ সময় বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, ‘আমরা মনে করছি, পরিবহন শ্রমিকেরা গণসমাবেশের আগে ধর্মঘট দেবেন না। আমরা সমাবেশ আয়োজনে পরিবহন শ্রমিকদের সহযোগিতা চাইছি।’

সূত্র: যুগান্তর

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *