দিপংকর বনিক দিপু, দিরাই(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
ধর্মীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সাদা রাজহাঁসে চড়ে বিদ্যা ও জ্ঞানদাত্রী দেবী সরস্বতী পৃথিবীতে আসেন। বিদ্যাদেবীর কৃপালাভের আশায় সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ঘরে ঘরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পঞ্চমী তিথিতে ২৬ জানুয়ারি পূজা উদযাপন করছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। যুগ যুগ ধরে দেবীর সামনে ‘হাতেখড়ি’ দিয়ে শিশুদের বিদ্যাচর্চার সূচনা হবে বলে মনে করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
কয়েক দিন বাদেই প্রতিমার গায়ে পড়বে রঙের আঁচড়। আর সেই লক্ষ্যেই মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে প্রতিমা তৈরিতে।এখন চলছে কাঁদামাটি দিয়ে প্রতিমার অবকাঠামো তৈরি ও প্রলেপ দেওয়ার প্রাথমিক কাজ।মৃৎশিল্পীরা দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন মূর্তি গড়তে।
মৃৎশিল্পীরা বলেন, কিছু অগ্রীম নিয়ে এবার বিভিন্ন সাইজের সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। আবার কিছু প্রতিমা বানানো থাকে। যা শেষ মুহূর্তে দিয়েও প্রতিমা কিনেন পূজারিরা। তিনি বলেন, এবার ৫৫ টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। যা সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হবে। সাজসজ্জায় যে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, তার দাম অনেক বেড়েছে। ফলে প্রতিমা তৈরির খরচ অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু লোকেরা এখন সবকিছুর দাম বাড়ায় দাম দিয়ে প্রতিমা কিনতে আগ্রহী নয়।
সরেজমিন কয়েকটি মৃৎশিল্পী কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, চলছে ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের প্রতিমা তৈরির কাজ। মৃৎশিল্পী মনোরঞ্জন পাল ও মৃৎ শিল্পী নেপু আচার্য বলেন, শীতকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিমা তৈরি করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এবছর শতাদিক মূর্তি তৈরি করছেন তারা। তারা বলেন, আমরা ৪-৫ জন এখানে মূর্তি তৈরির কাজ করছি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিরাই উপজেলার বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় পূজামণ্ডের কাজও চলছে উৎসব মুখোর পরিবেশে। পৌরসভার জগন্নাথ পূজা সংঘ, নবপূজ্য সংঘ, শ্যামানন্দ সংঘ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মহিলা কলেজ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পলিটেকনিক ইস্টিটিটিউট, রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম গত বছরের ন্যায় এ বছরও পূজার আয়োজন করছে। শ্যামানন্দ সংঘের সভাপতি আশীষ রায় বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজে মৃৎ শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছে। আমাদের পূজার মূর্তি তৈরির কাজও দ্রুত গতিতে চলছে। এ বছর জমকালো আয়োজনে পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, আমার জানা মতে দিরাইয়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের বাসা ও বিভিন্ন সংঘের আয়োজনে প্রায় হাজার খানেক পূজামণ্ডপে দেবী সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীর পরিবারে এই দিন শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন প্রথাও প্রচলিত। ঐদিন পাড়া মহল্লায় পূজামণ্ডপে পূজার্থীরা মায়ের পাদপদ্মে অঞ্জলি দেবেন।দেবীর সামনে ‘হাতেখড়ি’ দিয়ে শিশুদের বিদ্যাচর্চার সূচনা হবে অনেক স্থানে। এছাড়া কিছু মণ্ডপে ধর্মীয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।