আ’লীগে বিভক্তি, নৌকার পথের কাঁটা ‘ঈগল’

সিলেট

আলোচনায় সেলিম-শমসের

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। তার বিপরীতে দলের মনোনয়নবঞ্চিত হলেও ভোটের মাঠে আলোচনায় আছেন ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। দলীয় কোন্দলের কারণে এই দুই প্রার্থীকে ঘিরে জমে উঠেছে নির্বাচনী উত্তাপ। তাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লাড়াই আশা করছেন সমর্থকরা। নির্বাচনী নানা সমীকরণও গুণছেন ভোটাররা।

আওয়ামী লীগের দু’জন হেভিওয়েট প্রার্থীর পাশাপাশি ভোটের মাঠে সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী (সোনালী আঁশ) আলোচনায় আছেন। অন্য দুই প্রার্থী হলেন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আতাউর রহমান (ছড়ি) ও ইসলামী ঐক্যজোটের সাদিকুর রহমান (মিনার)।

সিলেট-৬ আসনে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা রয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও এই দুই উপজেলায় এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রæতি দিয়ে বেড়াচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে আসনটি ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার নিজের দখলে রেখেছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিএনপি বিহীন এই নির্বাচনেও ভোটার ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তবে ভোটের মাঠে কর্মী-সমর্থকদের ভিন্ন মতও দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, টানা তিন দফা সংসদ সদস্য থাকাকালে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলামের সঙ্গে দলের অনেক কর্মী-সমর্থকের দূরত্ব তৈরি হয়। কিছু নেতাকর্মী তার বিরুদ্ধে এককাট্টা রয়েছেন। এ কারণেই এবার তার আসনে ১১ নেতা দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত নুরুল ইসলাম মনোনয়ন পেলেও দলের নেতাদের সঙ্গে তার দূরত্ব ঘোচেনি। ফলে নির্বাচনে তার বিরোধীরা অনেকটা প্রকাশ্যে অন্য দুজন প্রভাবশালী নেতার পক্ষে সরব হন। ফলে নৌকার কর্মী সংকটে পড়ছে চারবারের এই সংসদ সদস্য। এর নেপথ্যে ত্যাগী কর্মীদের অবমূল্যায়ন।

নেতাকর্মীরা বলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম পল্লব সরাসরি নুরুল ইসলাম নাহিদের বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেনের সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। অন্যদিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর শাফি চৌধুরী ভেতরে-ভেতরে শমসের মুবিনকে সমর্থন দিচ্ছেন। তাদের বাইরে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী এ দু’জনের পক্ষে সরব রয়েছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। নির্বাচনের প্রচার শুরুর পরই এই দুই উপজেলায় স্পষ্ট হচ্ছে আওয়ামী লীগের গৃহদাহ।

এ ব্যাপারে মঞ্জুর শাফি চৌধুরী বলেন, তিনি তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে কোনো সমর্থন দেননি। তবে গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন এবং গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আসাই জানান, দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নানা কারণে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া নিজেদের উপজেলায় একজন ভালো প্রার্থী থাকায় তারা শমসের মুবিনের পক্ষ নিয়েছেন।

বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, উপজেলা কিংবা পৌরসভা নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমাকে রাখেননি। আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেননি। আর নেত্রী (শেখ হাসিনা) যেহেতু নির্বাচন দলের সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তাই আমিও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তার সঙ্গে রয়েছেন। দু-চারজন হয়তো অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে আছেন। তবে দলে কোনো বিভক্তি নেই। ভোটারেরা তাকে পুনরায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *