আলোচনায় সিলেট-৩

সিলেট

আর মাত্র ৭ দিন। এরপর ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে জেলার ৬টি আসনের মধ্যে সিলেট-৩ একটু বেশি আলোচনায়। কারণ- বড় বিরোধী দল বিএনপি এই নির্বাচনে না গেলেও আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবের শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁর দলেরই নেতা- কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল।

আওয়ামী লীগ এবার নৌকাবঞ্চিত নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রাখায় এমপি হাবিবের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন ডা. দুলাল।

গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রচারণায় নামেন সিলেট-৩ আসনের প্রার্থীরা। রাত-দিন এক করে নিজের ব্যাংকে ভোট টানতে মরিয়া প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। সিলেটের অন্য ৫টি আসনের তুলনায় সিলেট-৩ এ নির্বাচনের আমেজ একটু বেশি।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ এবং বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের ২৩১ নং আসন সিলেট-৩। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫৩ জন। এর মধ্যে ভোটার পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ১৬৭ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৯০ হাজার ২৮৫ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার (হিজড়া) রয়েছেন একজন।
সিলেট-৩ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ জন। প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল (ট্রাক), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক (লাঙ্গল), ইসলামী ঐক্যজোটের মইনুল ইসলাম (মিনার), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের শেখ জাহেদুর রহমান মাসুম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির আনোয়ার হোসেন আফরোজ (আম)।

প্রার্থী ৬ জন হলেও ভোটারদের বক্তব্য- মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন হাবিব ও দুলাল।
বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট-৩ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোটের মাঠে হাবিব ও দুলালের তৎপরতা দেখা গেলেও জাপা’র প্রার্থী আতিকুর রহমানর আতিককে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। বরং প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বড় ভূরিভোজের আয়োজন করে সমালোচিত হয়েছেন তিনি।

এদিকে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বাসিন্দা হাবিব ও আতিক প্রার্থী থাকায় ওই এলাকার ভোটস্রোত এলোমেলো হয়ে যাবার সম্ভাবনাও রয়েছে। অন্যদিকে নিজ এলাকা বালাগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী ঘরানার একক স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাক্তার দুলাল। তাঁর অবস্থা বালাগঞ্জে সুবিধাজনক থাকলেও গত ২ বছরে এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব বালাগঞ্জে করিয়েছেন বেশ উন্নয়নকাজ। ফলে হাবিবের ভোটও রয়েছে সেখানে।
অপরদিকে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত মোগলাবাজার থানা এলাকায় ভালো অবস্থান তৈরি করেছেন ডা. দুলাল। তার সাথে আছেন স্থানীয়  আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী। মোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম শাইস্তাও প্রকাশ্যে ডা. দুলালের পক্ষে কাজ করছেন। এছাড়া সিলেট-৩ আসনের টানা তিনবারের এমপি মরহুম মাহমুদ-উস-সামাদের কর্মী-সমর্থকরা স্বতন্ত্র এই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

এদিকে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সিলেট-৩ আসনে ‘চাপে’ ছিলো নৌকা। তবে সব ‘আশঙ্কাকে’ দূর করে ভাগাভাগির হিসেবে-নিকেস থেকে গত ১৭ ডিসেম্বর রক্ষা পান গত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী এবং এবারের নৌকার মাঝি এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব।

এবারের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতায় ২৬টি আসন পেয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। গুঞ্জন উঠে- এর মধ্যে একটি সিলেট-৩। নির্বাচনে এ আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থী থাকবে না। তবে সব গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে রবিবার বিকালে জানা যায়, আসনটি ছাড়তে হচ্ছেন না আওয়ামী লীগকে। ফলে চূড়ান্ত লড়াইয়ের আগে আরেক লড়াইয়ে জিতে গেলেন হাবিবুর রহমান হাবিব।
তবে আগামী ৭ জানুয়ারির আগে বলা যাচ্ছে না- শেষ হাসি কার। শেষ সময়ে এসে ভোটারদের ভোট কাড়তে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন হাবিব ও দুলাল।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *